Poll: চটি গল্প এর পাশাপাশি ভিন্ন ধরনের গল্প কি চলবে।
You do not have permission to vote in this poll.
Yes
77.78%
7 77.78%
No
22.22%
2 22.22%
Total 9 vote(s) 100%
* You voted for this item. [Show Results]

Thread Rating:
  • 15 Vote(s) - 3.13 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
থ্রিলার গল্প -সাজু ভাই - সিরিজ - (গল্প: সাজু ভাই) (সমাপ্ত গল্প)
#1
cool2 fight fight



গল্পঃ- সাজু ভাই

লেখক - সাইফুল ইসলাম সজীব

পর্বঃ- ০১ 



আমার বান্ধবীকে গতকাল রাতে ওর স্বামী খুন করেছে, অথচ কাল বিকেলে ও কল দিয়ে বলেছে "এবার বাপের বাড়ি এলে তোদের বাড়ি গিয়ে দুদিন থাকবো। কতদিন তোর সঙ্গে দেখা হয় না, স্কুলের সেই দিনগুলো আজও খুব মনে পরে।"

আমার বান্ধবীর নাম শারমিন, আমরা একসাথে এসএসসি পাশ করেছি। পরীক্ষার পরে কলেজে ভর্তি হলাম আমি, কিন্তু শারমিনের বিয়ে হয়ে গেল আঙ্কেল আন্টির পছন্দের ছেলের সঙ্গে। শারমিন নিজেও তাকে খুব পছন্দ করেছিল, নিজের স্বামীর প্রশংসা করতো সবসময়। সকাল বেলা খবরটা শুনে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হলাম, কারণ শারমিন ছিল আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু।

ওদের বাড়িতে গিয়ে দেখি কান্নাকাটির ভিড় জমে উঠেছে, সবাই কেমন আহাজারি করছে। আমার নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেল কিন্তু মুছতে ইচ্ছে করছে না। আর বেশিক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে না তাই তাড়াতাড়ি বাড়ির দিকে হাঁটতে লাগলাম। বান্ধবীর লাশ নাকি ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে নিয়ে গেছে তাই সেখান থেকে নিয়ে আসলে আবার আসবো।

বাড়ি ফিরে কিছু ভালো লাগছে না, মোবাইল বের করে অনলাইনে গেলাম। সাজু ভাইয়ের গল্প পড়ে মন খারাপ দুর করতে চাই, জানিনা সম্ভব হবে কি না, কিন্তু চেষ্টা করতে দোষ কি?

সাজু ভাইয়ের গল্প খুব ভালো লাগে, তার অনেক পাঠক পাঠিকা আছে। তার নিজের একটা ছোট্ট ব্যক্তিগত গ্রুপ আছে, সেখানে সবাই খুব হাসির পোস্ট করে।

নিউজফিডে সাজু ভাইয়ের গ্রুপের একটা পোস্ট ভেসে আসলো, মোঃ সজীব নামের একটা আইডি দিয়ে পোস্ট করা হয়েছে। সজীব ছেলেটাকে এর আগেও বিভিন্ন পোস্ট করতে দেখেছি। সাজু ভাই তার খুব ভালো বন্ধু, আর তারা নাকি একসাথে কলেজে পড়াশোনা করেছে।

সজীব ছেলেটার পোস্টটা ছিল বেস্ট ফ্রেন্ড নিয়ে, সে লিখেছেনঃ-

" প্রতিটি মানুষের জীবনে একটা ভালো বন্ধ থাকে যেটা খুবই স্পেশাল। সাজু, শফিক, রকি আর আমি সজীব ছিলাম সবচেয়ে ভালো বন্ধু। কিন্তু সেই চারজনের মধ্যে থেকে যেদিন শফিক হারিয়ে গেল আকাশের তারা হয়ে, সেদিন আমরা তিনজন খুব কেঁদেছিলাম। আজও মাঝে মাঝে শফিকের জন্য কান্না আসে, রকি সাজু আর আমি, আমরা এখন একেকজন একেক জেলায় ছড়িয়ে আছি। তিনজনের কারো সঙ্গে কারো দেখা হয় না, কিন্তু তবুও একটা আশা আছে একদিন হঠাৎ করেই দেখা হবে। কিন্তু শফিকের সঙ্গে কোনদিন দেখা হবে না, সৃষ্টিকর্তা একবার যাকে আকাশে উঠিয়ে নিয়ে যায় তাকে আর ফেরত দেয়না। ভালো থেক বন্ধু শফিকুল ইসলাম শফিক। "

পোস্টটা পড়ে মনটা আরও বেশি খারাপ হয়ে গেল কারণ বান্ধবীর কথা মনে পরছে। আমি তখন ওই পোস্টের মন্তব্যে লিখলামঃ-

" আপনার পোস্ট পড়ে দুচোখ ভর্তি পানি এসেছে কারণ আজকেই আমার বান্ধবী তার স্বামীর হাতে খুন হয়েছে। ওর মৃত্যুর জন্য এতটা কষ্টে হচ্ছে যে কষ্ট কাউকে বোঝানো সম্ভব না। "

কমেন্ট করে গল্প পড়ছিলাম, কিছুক্ষণ পর দেখি আমার কমেন্টের রিপ্লাই এসেছে।

সে লিখেছেনঃ-

- কীভাবে আপনাকে শান্তনা দেবো জানা নেই, তবে ধৈর্য ধরুন আপনি। আর আপনার বান্ধবীর স্বামী কেন তাকে হত্যা করেছে, কৌতুহল হচ্ছে জানার জন্য।

- আমি লিখলাম, জানি না কেন তাকে খুন করল, যদি জানতে পারতাম তাহলে তো মনকে একটু শান্তনা দিতাম।

- সে আবার লিখলো, কোন জেলায় এই ঘটনাটা ঘটেছে? মানে আপনাদের এলাকা কোথায়?

- টাঙ্গাইলের ঘটনা, আমাদের বাড়ি টাঙ্গাইল।

- ওহ্ আচ্ছা, ঠিক আছে মনকে শক্ত করুন আর দোয়া করবেন আপনার বান্ধবীর জন্য।

এরপর আর কোন রিপ্লাই আসেনি, আমি তখন ভাবলাম " তার মাধ্যমে যদি সাজু ভাইয়ের সঙ্গে একটু পরিচিত হতে পারতাম? কারণ আজ পর্যন্ত সাজু ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়নি, মেসেজ করেছি কিন্তু রিপ্লাই আসেনি।

তাই সজীব ছেলেটার আইডি তে গিয়ে রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে মেসেজ দিলাম। এবং দুই মিনিট পরেই রিপ্লাই আসলোঃ-

- আসসালামু আলাইকুম।

- ওয়া আলাইকুম আসসালাম, কেমন আছেন?

- আলহামদুলিল্লাহ, আপনি তো একটু আগেই মনে হয় কমেন্ট করছিলেন তাই না?

- জ্বি, আমার নাম রুহি।

- ওহ্ আচ্ছা আমি সজীব। তবে আপনার বান্ধবীর কথা শুনে খুব খারাপ লাগছে, সাজু নিজেও সেই কমেন্ট দেখে মন খারাপ করেছে।

- আপনি সাজু ভাইয়ের খুব ভালো বন্ধু তাই না?

- হ্যাঁ, আমরা একসাথে পড়াশোনা করেছি তবে আমি এখন চট্টগ্রামে আছি আর সাজু ওদের বাড়ি আছে।

- আমাকে একটা উপকার করবেন?

- জ্বি চেষ্টা করবো, বলেন কি করতে হবে?

- আমি আপনার বন্ধুর সঙ্গে কথা বলতে চাই, তার গল্পগুলো ভালো লাগে আমার।

- ওহ্ আচ্ছা, ঠিক আছে চিন্তা করবেন না সাজু নিজেই আপনাকে নক দেবে, আমি ব্যবস্থা করে দেবো।

- মেলা মেলা ধন্যবাদ।

- মেলা মেলা শব্দটা নিশ্চয়ই সাজুর কাছ থেকেই শিখেছেন?

- হিহিহি জ্বি ঠিক বলেছেন।

- আপনার আপত্তি না থাকলে আমি কি আপনার সঙ্গে পরিচিত হতে পারি? যদিও এটা ঠিক নয় কারণ সাজুর পাঠিকার সঙ্গে আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে ভয় করে, যদি বিচার দেয়?

- ওমা, বিচার দেবো কেন? তাছাড়া আপনাকে তো আমি আগে নক দিয়েছি।

- আচ্ছা, আমি মোঃ সজীব, জেলা বাগেরহাট, আপাতত চট্টগ্রামে একটা কোম্পানিতে আছি।

- আমি রুহি, বাসা টাঙ্গাইল, এবার এইচএসসি পরীক্ষা দেবো। আচ্ছা, সাজু ভাইয়ের বাসাও তো মনে হয় বাগেরহাট জেলা, তাই না?

- হ্যাঁ।

আর বেশি কথা এগোতে পারে নাই কারণ আমি ডাটা বন্ধ করে মাকে কাজে সাহায্য করতে চাই গেলাম। মোবাইল নিয়ে বসে থাকলে সারাক্ষণ শুধু বকাবকি করে তাই কাজ করতে হয়। আগের চেয়ে মনটা একটু ভালো লাগছে, ওই ছেলের সঙ্গে কথা বলে নাকি সাজু ভাইয়ের সঙ্গে কথা হবে সেজন্য,  সেটা বুঝতে পারছি না।

দুপুরের খাবার খেতে বসে বাবার কাছে একটা কথা শুনে খাবার গলায় আটকে গেল। শারমিনের লাশের কাছেই নাকি একটা বাঁধাই করা কাগজে লেখা ছিল, "প্রথম শিকার"।

কিন্তু এর মানে কি? শারমিনের স্বামী যদি খুন করে তাহলে "প্রথম শিকার" মানে কি? তিনি কি আবার খুন করবেন কাউকে? নাকি অন্য কিছু?

- বাবা বললো, অনেকেই ধারণা করছে যে সেই ছেলে নাকি খুন করেনি। এটা নাকি বাহিরের কোন চক্রের আয়োজনে ষড়যন্ত্র চলছে, এবং তার সঙ্গে জড়িত হতে পারে আরও অনেকেই।

পুলিশ নাকি ধারণা করছে যে, খুব তাড়াতাড়ি অন্য কেউ খুন হতে পারে। আর যদি খুন হয় তবে বোঝা যাবে কাদেরকে খুন করবে খুনী? আপাতত ওর স্বামী পুলিশের হেফাজতে আছে কিন্তু তবুও শারমিনের সকল আত্মীয় স্বজনদের সাবধানে থাকতে বলা হয়েছে।

বিকেলে বিছানায় শুয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে ডাটা চালু করে দেখি সাজু ভাইয়ের মেসেজ।

- সে লিখেছে, কেমন আছো তুমি? তোমার বান্ধবী খুন হয়েছে খবরটা শুনে কষ্ট হচ্ছে, আমাদের এক বন্ধু ছিল কলেজ জীবনে। যার জন্য পোস্ট করল সজীব, সেই শফিকের জন্য আমাদের কত কষ্ট হচ্ছে সেটা আমরা জানি।

- আমি বললাম, ভাইয়া আপনার সঙ্গে এভাবে যে কথা হবে ভাবতে পারিনি। তবে এমন একটা দিনে যোগাযোগ হচ্ছে যে মনটা খুব খারাপ।

- সমস্যা নেই, স্বাভাবিক হতে চেষ্টা করো।

- সাজু ভাই আপনার গল্পগুলো খুব সুন্দর।

- ধন্যবাদ।

- না নেবো না।

- কেন?

- মেলা মেলা ধন্যবাদ বলতে হবে তাহলে আমি নেবো।

- হাহাহা, এটা তো গল্পের মধ্যে ব্যবহার করি তাই বলে বাস্তবে বলতে হবে?

- হ্যাঁ, আমার সঙ্গে বলতে হবে, পারবেন না?

- পারবো, আচ্ছা তোমার বাসা কোথায়?

- টাঙ্গাইল, আপনার তো বাগেরহাট?

- হ্যাঁ বাগেরহাট, তোমাদের জেলায় যাবার খুব ইচ্ছে আছে আমার। একটা খুব পরিচিত মানুষ আছে তার সঙ্গে দেখা করতে যাবো।

- ওয়াও, কবে আসবেন? আমাকে সেদিন কিন্তু বলবেন প্লিজ প্লিজ প্লিজ।

- কেন?

- আমি আপনার সঙ্গে দেখা করবো।

- তাই?

- হ্যাঁ, সাজু ভাই আপনার গল্পগুলো পড়ে অনেক ভালো লাগে তাই সবসময় কথা বলতে মন চায়। আর দেখা করতে পারলে তো কোন কথাই নেই, টাঙ্গাইল এলে বলবেন তো?

- আচ্ছা ঠিক আছে, যেদিন যাবো সেদিন বলবো।

- আর আপনার বন্ধু সজীবকে নিয়ে আসবেন।

- কেন?

- তার সঙ্গেও দেখা করবো।

- ও চাকরি করে তাই সুযোগ পাবে কিনা জানি না বলে কথা দিতে পারি না।

- আপনাদের বন্ধু শফিক ভাই কীভাবে মারা গেছে বলা যাবে? খুব জানতে ইচ্ছে করছে।

- সে তো অনেক বড় কাহিনি।

- বলেন সমস্যা নেই, আমি ফ্রী আছি তাই আমার অফুরন্ত সময়।

- কিন্তু এত কথা লিখতে সময় লাগবে।

- মেসেঞ্জারে কল দেবো? যদি আপনার আপত্তি না থাকে তাহলে।

- আজকেই শুনতে হবে? মাত্র তো পরিচয়।

- এখন বলতে না চাইলে পরে বলবেন।

- ঠিক আছে পরে একসময় বলবো।

---

মাগরিবের কিছুক্ষণ আগে শারমিনের লাশ কবর দেয়া হয়েছে, অনেক মানুষের ভিড় ছিল কিন্তু সন্ধ্যা হয়ে গেছে তাই তাড়াতাড়ি দাফনকাফনের  কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। মানুষের জীবন এতটুকু কেন? মরে গেছে তাই এখন সবাই তাড়াতাড়ি মাটির নিচে রাখতে ব্যস্ত। সন্ধ্যা হয়ে গেছে তাই সবাই কত তাড়াহুড়ো করে কবর দিলো, আজকের পর থেকে শারমিনের চিরদিনের জন্য একটা ঘর হলো। হাশরের আগ পর্যন্ত তাকে আর পৃথিবীর কেউ বিরক্ত করবে না।

আমি যখন মাঝে মাঝে ওকে জিজ্ঞেস করতাম, কোই যাস? শারমিন বলতো, পরের বাড়ি। আবার বাপের বাড়ি এলে বলতো "বাপের বাড়ি এসেছি"
পৃথিবীতে মেয়েদের কোন বাড়ি নেই, একটা হচ্ছে স্বামীর বাড়ি আরেকটা হচ্ছে বাপের বাড়ি অথবা ভাইদের বাড়ি। এদের কোন বাড়ি নেই।

রাতের খাবার খেয়ে দশটার দিকে অনলাইনে গেলাম, সজীব নামে ছেলেটার আইডির পাশে সবুজ বাতি জ্বলছে।

- নক দিয়ে লিখলাম, কেমন আছেন?

- সঙ্গে সঙ্গে রিপ্লাই এলো, আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি, আপনি?

- আমিও ভালো আছি।

- সাজুর সঙ্গে কথা হয়েছে?

- হ্যাঁ, আপনি রাতে খেয়েছেন?

- হ্যাঁ হোটেল থেকে খেয়ে আসলাম।

- হোটেলে কেন?

- ব্যাচেলর জীবন তো।

- নিজে রান্না করতে পারেন না? নাহলে যেহেতু চাকরি করেন তাই বিয়ে করুন।

- হাহাহা, বিয়ে?

- কেন? হাসির কারণ কি?

- আচ্ছা সরি, হাসবো না।

- হাসার কারণ থাকলে অবশ্যই হাসবেন কিন্তু অকারণে কেন?

- আর হবে না।

- মনে থাকে যেন।

- জ্বি সবসময় মনে থাকবে।

ছেলেটা আর মেসেজ দেয়নি, একটু ভালো লাগল কারণ অকারণে মেসেজ দিয়ে বিরক্ত করে না। রাতে আরও কিছুক্ষণ অনলাইনে থেকে তারপর ঘুমিয়ে গেলাম। শারমিনের বিষয়টা মন থেকে বের করতে চাচ্ছি কিন্তু পারছি না।

সকাল বেলা মায়ের চিৎকারে ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলে দিলাম। মা বললোঃ-

- সর্বনাশ হয়ে গেছে, তোর আরেকটা বান্ধবী আছে না ববিতা? গতকাল রাতে নাকি ববিতা খুন হয়েছে, আর ওর লাশের পাশেও একটা কাগজে লেখা ছিল " দ্বিতীয় শিকার "।

- আমি হতবাক হয়ে বললাম, কিহহ...?

- হ্যাঁ রুহি, আর শুধু তাই নয়, " দ্বিতীয় শিকার " শব্দের নিচে আরেকটা লেখা ছিল।

- সেটা কি?

- লেখা ছিল " সব বান্ধবীরা অপেক্ষা করো "। সেটাই যদি হয় তাহলে তো তোরও বিপদ আছে।

.
.
.

চলবে...
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 3 users Like Bangla Golpo's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#2
পর্বঃ- ০২




আমি ভয়ে থরথর করে কাঁপছি, বাবা নাকি বলে দিয়েছে ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না। কিন্তু এমন কেন হচ্ছে সকলের সঙ্গে? পরপর দুই রাতে দুজন বান্ধবী খুন হয়ে গেল।

ছোট ফুফু সারাক্ষণ আমার সঙ্গে আছে, বাবা মনে হচ্ছে খুব টেনশনে আছে। আমি রুম থেকে বাহিরে একবারও গেলাম না, মা এসে বললো " মোবাইল নিয়ে বসে থাক তবুও বাহিরে বের হোস না। "

এই প্রথম মা আমাকে মোবাইল হাতে নিয়ে বসে থাকতে বলেছে, বিপদে পরলে মানুষ কতকিছু ভুলে যায়। সবই স্বার্থ, যখন যেটা মানুষের দরকার হবে সেটাই তারা করবে। আজকে যেটা সমস্যার সম্মুখীন মনে হবে, কাল সেটা কাজে লাগলে আদর করে টেনে নেবে। শীতকালে রোদের তাপে আরাম পেতে সবাই সূর্য ওঠার অপেক্ষা করে, আর গরম কালে সেই সূর্যকে আড়াল করতে সারাক্ষণ মেঘের কামনা করে।

অনলাইনে ছিলাম, এগারোটার দিকে সাজু ভাইর বন্ধু সজীব সাহেব মেসেজ দিল।

- সে লিখেছেন, আসসালামু আলাইকুম।

- ওয়া আলাইকুম আসসালাম, বেশি ভালো নেই। আমরা সবাই খুব টেনশনে আছি আর সারাক্ষণ ঘরবন্দী হয়ে থাকছি।

- কেন কেন?

- গতকাল রাতে আমার বান্ধবী খুন হয়েছে সেটা তো জানেন? কিন্তু আজ রাতে আবার আরেকটা বান্ধবী খুন হয়েছে, আর দুটো লাশের পাশে ছোট্ট একটা চিরকুট থাকে।

- বলেন কি? কি লেখা থাকে?

- গতকাল লেখা ছিল " প্রথম শিকার " আর আজ লেখা ছিল " দ্বিতীয় শিকার, তৈরী থেকো সকল বান্ধবীরা "।

- সাংঘাতিক ব্যাপার।

- হ্যাঁ, আমরা সবাই খুব টেনশনে, বাবা আমাকে বাড়ি থেকে বের হতে নিষেধ করেছে।

- আপাতত সেটাই ভালো হবে, কিন্তু পুলিশ কেন কিছু করছে না?

- জানি না, আর পুলিশ কিছু করে কিনা সেটা তো বাড়িতে বসে জানা সম্ভব না। হয়তো বাজারে বা ওদের বাড়িতে গিয়ে তদন্ত করার চেষ্টা করছে।

- কিন্তু মারা যাবার পরে আর কি হবে? যা করার আগে করে না কেন? কে এই খুনি?

- জানি না, আচ্ছা বাদ দেন। আপনি কি করেন? আপনার অফিস নেই?

- হাহাহা আর অফিস, ছোটখাট একটা কোম্পানি তাই ওতো চাপ নেই।

- কাজ কখনো ছোট হয় নাকি?

- হয় না?

- না হয় না।

- আচ্ছা ঠিক আছে মেনে নিলাম।

- আপনার সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগে, মাঝে মাঝে নক করলে বিরক্ত হবেন?

- না না সমস্যা নেই, আমিও কিন্তু আপনাকে নক করেছি আগে তাই বিরক্ত হলে বলবেন প্লিজ।

- না না বিরক্ত নই, আসলে সকাল থেকে ঘরবন্দী হয়ে আছি তো তাই অনলাইনে।

- সাজুর সঙ্গে কি আর কথা হয়েছে?

- না, সাজু ভাই তো অনলাইনে নেই, আমি একটু আগেই চেক করলাম।

- ও তো সবসময় এক্টিভিটি বন্ধ করে রাখে তাই বোঝা যায় না, তুমি নক দিয়ে দেখো ঠিকই চোরের মতো ঘাপটি মেরে বসে আছে।

- হিহিহি, আপনার বন্ধুকে বলে দেবো যে আপনি তাকে চোর বলেছেন। আরেকটা কথা?

- হাহাহা, আমি কি ভয় পাই নাকি? আচ্ছা কি বলতে চান?

- একটু আগের মেসেজে তুমি করে লিখেছেন তা কিন্তু ভালোই লেগেছে। যেহেতু আমি আপনার ও সাজু ভাইয়ের অনেক ছোট তাই আপনি আমাকে তুমি করে বলতে পারেন।

- ঠিক আছে চেষ্টা করবো।

- সাজু ভাই কিন্তু প্রথম সাক্ষাতেই তুমি করে কথা বলেছে, মেলা মেলা ভালো লেগেছে।

- সাজু সবসময় সিনিয়র জুনিয়র সবাইকে তুমি করে বলে।

- ওহ্ আচ্ছা।

- হুম। আচ্ছা রাখি তাহলে?

- কেন বিজি নাকি?

- হুম একটু।

- আচ্ছা আল্লাহ হাফিজ।

-----

বারোটার দিকে আমাদের বাড়িতে পুলিশ এসেছে এবং সঙ্গে বাবাও আছে। পুলিশ এসে সরাসরি আমার সঙ্গে কথা বলতে চাইলেন কারণ তাদের কিছু জিজ্ঞেসাবাদ করার আছে। আমি দারোগা সাহেবের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।

- দারোগা বললেন, তোমাকে কিছু প্রশ্ন করি তুমি ভেবে জবাব দেবে।

- জ্বি স্যার।

- আগে বলো তোমাদের ব্যাচের মধ্যে কতজন বান্ধবী ছিলে তোমরা?

- স্যার আমরা একসাথে এগারোটা মেয়ে ছিলাম আর সতেরোজন ছেলে।

- যারা দুজন খুন হয়েছে তাদের সঙ্গে তোমাদের ব্যাচের কারো কোন শত্রুতার কিছু মনে পরে কি তোমার? মানে দেখা গেল এসএসসি পরীক্ষার আগের কোন মনকষাকষি ঘটনা।

- না স্যার তেমন কিছু মনে পরে না, তাছাড়া যখন একসাথে পড়াশোনা করেছি তখন মাঝে মাঝে দু একজনের সঙ্গে তো রাগারাগি হতেই পারে। আর সেই সমস্যার সমাধান তো তখনই মিটে যেতো, তাই বলে সেগুলো নিয়ে খুনাখুনি হবে?

- তোমার যতটুকু বুদ্ধি তুমি ততটুকু কথা বলছো, কিন্তু আমাদের চিন্তা অন্যরকম। খুব ছোট ছোট বিষয় গুলোও একদিন অনেক বড় হয়ে যায় তাই সবকিছু জানতে হবে।

বাবা পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি বললেন,

- স্যার মানলাম কারো সঙ্গে কিছু একটা নিয়ে ক্লাসে ঝামেলা হয়েছে বা কারো জন্য কেউ শিক্ষক এর হাতে মার খেয়েছে। কিন্তু তাই বলে এতদিন পরে সেই কারণে খুন করবে কেন? আে তাছাড়া সকল বান্ধবীদের হুমকি?

- দেখুন, একটা বাংলা সিনেমার মধ্যে দেখছিলাম যে, ভিলেন একটা লোককে গুলি করার সময় বলছেন " মাখন লাল, কুড়ি বছর আগে তুই একটা থাপ্পড় মরেছিলি কিন্তু সেদিন তোকে কিছু করতে পারি নাই। আজ কুড়ি বছর পরে সেই থাপ্পড় পরিশোধ করতে চাই, কিন্তু কুড়ি বছরে সেই থাপ্পড় সুদেআসলে একটা বন্দুকের গুলি সমান হয়ে গেছে। তাই তোকে গুলি করবো। "

দারোগার কথা শুনে বাবা চুপ হয়ে গেল, তার মুখ দিয়ে আর কিছু বেরচ্ছে না। কিন্তু দারোগা সাহেব এমন একটা সিনেমার ঘটনা বলে নিজেকে সবার সামনে উপস্থাপন করে চারিদিকে তাকাচ্ছে। আর তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললোঃ-

- তোমাদের স্কুলের হেডমাস্টারের কাছে জানতে পেরেছি যে তুমি সবচেয়ে ভালো ছাত্রী। তাই তুমিই সবকিছু মনে করতে পারবে, আমরা এখন চলে যাচ্ছি। তুমি একা একা বিছানায় শুয়ে শুয়ে ঠান্ডা মাথায় কল্পনা করো, খুঁজে বের করো কে এমন থাকতে পারে? যে তোমাদের উপর প্রতিশোধ নিতে এতটা মরিয়া হয়ে গেছে?

- ঠিক আছে স্যার।

- আর খবরদার তুমি বাড়ি থেকে বের হবে না, কারণ তোমাদের রাস্তার পাশে বাড়ি যদি খুনি এসে রাস্তায় দাঁড়িয়ে গুলি করে দেয় তাহলে তো ওদের আরেকটা মিশন কমপ্লিট হয়ে যাবে।

- বাবা বললো, স্যার প্লিজ এভাবে বলবেন না।

- আচ্ছা সরি, কিন্তু রুহি, তোমাকে যা বলছি তুমি তাই করবে, আমি আবার আসবো।

- ঠিক আছে স্যার।

- বাবা বললো, কিন্তু স্যার আপনারা কীভাবে শিওর হচ্ছেন যে খুনি ওদের ব্যাচের কেউ? এমন তো হতে পারে এটা আলাদা কোন চক্রান্ত! কিন্তু সেই দিকে না গিয়ে আপনারা মিছামিছি পরে আছেন।

- দেখুন, যেহেতু আমরা কোনকিছু দিয়ে শুরু করতে পারি নাই তাই এটা দিয়ে আরম্ভ করি। আর পথে নামলেই পথ চেনা যায়, ঘরে বসে অচেনা পথের ভয়ে কেন ভীতু হবো?

- তাও ঠিক।

- জ্বি, দেখা গেল এটা দিয়ে আরম্ভ করেছি ঠিকই কিন্তু আসল ঘটনার সূত্র এটা দিয়ে আবিষ্কার হয়ে যেতে পারে।

- জ্বি স্যার।

- তাহলে আমরা উঠি?

- আচ্ছা।

- আর রুহি, তোমার মোবাইল নাম্বারটা দাও, যদি দরকার হয় যেকোনো সময় সঙ্গে সঙ্গে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করে নেবো। আর ভয় পাবার কিছু নেই, তোমাদের মধ্যে আর কেউ খুন হবার আগেই আমি চেষ্টা করবো খুনিকে ধরে ফেলতে। তুমিসহ সকল বান্ধবীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে তাই আশা করি শীঘ্রই ধরা হবে।

দারোগা সাহেব আমার মোবাইল নাম্বার নিয়ে বের হয়ে গেল, আমি আবারও নিজের রুমে ঢুকে সত্যি সত্যি ভাবতে বসলাম। কিন্তু মাথার মধ্যে তেমন কিছু খুঁজে বের করতে পারি না কারণ তেমন কোন ঘটনা মনে পরে না। ভাবতে ভাবতে মাথার মধ্যে ব্যথা শুরু হয়ে গেল কিন্তু তবুও কিছু বলার মতো খুঁজে বের করতে পারি নাই। দারোগা সাহেব যদি কল দিয়ে জিজ্ঞেস করে তাহলে কি বলবো?

সারাটি বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা এলো, সন্ধ্যা থেকে মা আমাদের সকল জানালা দরজা বন্ধ করেই আমাকে নিয়ে রুমের মধ্যে বসে আছে। সন্তানের জন্য মা-বাবার এতো চিন্তা? সত্যি আমাকে যে তারা কতটা ভালবাসে তা আরেকবার প্রমাণিত।

সাজু ভাইকে নক দিছিলাম কিন্তু অনলাইনে নেই মনে হয় কারণ মেসেজ সেন্ট হয়নি। এদিকে তার বন্ধু সজীব সাহেব সেই দুপুর থেকে আনএক্টিভ, মেসেজ দিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে করছে কিন্তু সে নেই। মেজাজ খারাপ লাগছে।

রাতের খাবার খেয়ে মা আমার সঙ্গে ঘুমালেন, অনেক বছর পরে আজ মায়ের সঙ্গে বিছানায় ঘুমালাম। মায়ের সঙ্গে গল্প করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পরেছি বুঝতে পারিনি। রাতে ঘুমানোর আগে প্রার্থনা করেছিলাম, আল্লাহ সকাল বেলা যেন আর কারো মৃত্যুর খবর শুনতে নাহয়।

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে বুকটা ধুকপুক শুরু করেছে, না জানি কখন কি খবর আসে? বাবার কাছে জিজ্ঞেস করে জানলাম যে সবাই নাকি সুস্থ আছে। মনটা শান্ত হলো, তাহলে একটা রাত আমরা বাঁচতে পারছি। কিন্তু খুনি ধরা না পরলে এভাবে কতদিন?

নাস্তা করছিলাম তখন দারোগা সাহেবের কল এসেছে, রিসিভ করে সালাম দিলাম।

- আসসালামু আলাইকুম স্যার।

- ওয়া আলাইকুম আসসালাম, কেমন আছো?

- জ্বি স্যার ভালো।

- তোমাদের সবার বাড়িতে কল দিয়ে খবর নিয়ে নিলাম, সবাই সুস্থ আছে।

- আলহামদুলিল্লাহ।

- আচ্ছা তোমাকে যা বলেছিলাম সেটা কি কিছু বের করতে পেরেছো?

- স্যার আমাদের সঙ্গে একটা ছেলে পরতো, সে দ্বিতীয় শিকার হওয়া ববিতাকে পছন্দ করতো।

- গুড, তারপর?

- ববিতা রাজি হয়নি আর খুব অপমান করেছিল সেই ছেলেকে।

- ওই ছেলের নাম কি?

- প্রশান্ত কুমার, কিন্তু ও এখন ভারতে আছে।

- কেন?

- সেখানে গিয়ে ভর্তি হয়েছে শুনলাম কারন ওর মামা থাকে কলকাতা শহরে।

- তুমি ভালো একটা বিষয় মনে করেছো, হতে পারে সেই প্রশান্ত কুমার বাংলাদেশে এসেছে এবং গা ঢাকা দিয়ে কাজগুলো করছে।

- কিন্তু স্যার সে খুব নম্রভদ্র, তার দ্বারা এমন কাজ অসম্ভব মনে হচ্ছে।

- যারা খুব মিনমিনে তারা মনের মধ্যে অনেক বেশি অভিমান পুষে রাখে। এবং সেই অভিমান যখন বিস্ফোরিত হয় তখন সেটা মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পরে।

- ঠিক আছে স্যার আপনারা তদন্ত করুন।

- আচ্ছা ঠিক আছে।

বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে দারোগা সাহেবের কল দেখে অবাক হলাম, তার সঙ্গে কথা বলতে গেলেই মনটা ভয়ে কুঁকড়ে যায়।

- হ্যালো স্যার।

- রুহি তুমি কোথায়? সর্বনাশ হয়ে গেছে। ( স্যার এর কণ্ঠ অস্বাভাবিক)

- কি হয়েছে স্যার? আমি তো বাসায়।

- সামিয়া নামের তোমাদের কোন বান্ধবী ছিল?

- হ্যাঁ ছিল, কিন্তু এসএসসি পরীক্ষার আগেই ও ঢাকা চলে গেছে। ক্লাস টেনে উঠে কিছুদিন ক্লাস করে চলে গেছে ঢাকা শহরে, তারপর থেকে তো সেখানেই থাকে। ওর মা-বাবার সঙ্গে মিরপুরে বাস করে, আমার সঙ্গে ফেসবুকে কথা হয় মাঝে মাঝে।

- সামিয়া গতকাল রাতে খুন হয়েছে?

- কি বললেন স্যার?

- হ্যাঁ, ওর লাশের পাশে লেখা ছিল " তৃতীয় শিকার "। একটু আগেই থানায় খবরটা এসেছে। আচ্ছা রাখি আমি, তুমি বাড়ি থেকে বের হয়ে কোথাও যাবে না।

আমি মোবাইল কেটে দিয়ে ভয়ে কষ্টে কান্না করে দিলাম, এটা কি হচ্ছে? আমরা কি করেছি?

মা রান্না করা বন্ধ রেখে আমার কাছে বসে রইল কিছুক্ষণ তারপর দরজা বাহির থেকে বন্ধ করে দিয়ে চলে গেল রান্না করতে।

দুপুর একটা বাজার খানিকটা আগে দারোগা কল দিল আবারও, কল ধরতে ইচ্ছে করছে না কারণ যদি খারাপ কিছু শোনা লাগে?

- তবুও শেষবারে রিসিভ করে সালাম দিলাম।

- রুহি তুমি কি বাসায়?

- হ্যাঁ স্যার।

- সাজু ভাই নামে কাউকে চেনো? ফেসবুকে নাকি গল্প লেখালেখি করে, চেনো তাকে?

আমার বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো, সাজু ভাইর কথা দারোগা জানলো কীভাবে? আর তার কথা তিনি জিজ্ঞেস করলো কেন?

- দারোগা বললেন, চুপ করে আছো কেন? বলো তুমি তাকে চেনো নাকি?

- জ্বি স্যার, সামান্য কথাবার্তা হয়েছে।

- তাহলে তুমি বাসায় থাকো, আমি এক্ষুনি তোমার সঙ্গে দেখা করতে আসছি।

- কিন্তু কেন স্যার? সাজু ভাইয়ের কখা জিজ্ঞেস করলেন কেন?

- আমি এসে সবকিছু বলবো, মনে হয় এবার খুনির কাছে পৌঁছে যাবো।

,
,
,

চলবে...?

,

===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 3 users Like Bangla Golpo's post
Like Reply
#3
Nextttttt
[+] 1 user Likes Fardin ahamed's post
Like Reply
#4
goood///
gossip google photo adda ( Bengali boudi didi by sbsb )
https://photos.app.goo.gl/uH4u9D6hARcQFiP79

[+] 1 user Likes 212121's post
Like Reply
#5
পর্বঃ-০৩


বিছানায় শুয়ে এবার হাউমাউ করে কান্না করতে লাগলাম, রান্না ঘর থেকে মা দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললোঃ-

- রুহি মা, কি হয়েছে তোর? 

- মা আমার খুব ভয় করছে, আমার মনে হচ্ছে যে এবার মনে হয় আমি মারা যাবো। মা আমি মরতে চাই না, বাবাকে বলো যেভাবেই হোক আমাকে যেন বাচিয়ে রাখতে পারে। মাগো, ও মা? 

- তুই কান্না করিসনা মা, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে, এভাবে ভেঙ্গে না পরে আল্লাহ আল্লাহ কর। আমি আর তোর বাবা থাকতে কেউ কিছু করতে পারবে না তোকে। 

- মাগো, কেন এমন হচ্ছে সবার সঙ্গে? আমরা কি দোষ করেছি মা? 

- জানি না, তুই একটু শান্ত হয়ে বস। 

- কীভাবে শান্ত হবো? আমাদের সঙ্গে আরেকটা মেয়ে পড়তো ওর নাম সামিয়া। সে এসএসসি পাশ করার আগেই ঢাকা চলে গেছে, কিন্তু গতরাতে ওর খুন হয়েছে মা। 

- বলিস কি? কে বলেছে তোকে? 

- দারোগা সাহেব কল দিছিল, তুমি রান্না করতে যাবার আগেই কল দিছিল। আর সামিয়ার লাশের পাশে লেখা ছিল " তৃতীয় শিকার "। ও মা? এবার যদি আমি চতুর্থ শিকার হয়ে যাই? তাহলে আমি কবরে চলে যাবো তাই না? আমাকে তোমরা কোন যায়গা মাটি দেবে? 

- চুপ কর রুহি, চুপ কর! কেন এসব অলুক্ষুনে কথা মুখে আনিস? বললাম তো আমরা থাকতে তোর কিচ্ছু হতে দেবো না। আজকেই তোর আপুর কাছে কল দিয়ে কথা বলবো, তারপর ওর কাছে পাঠিয়ে দেবো। 

- কোন লাভ নেই মা, সামিয়াকে যেহেতু ঢাকা বসে মেরে ফেলেছে তখন আমিও পালিয়ে বাঁচতে তো পারবো না। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে, তোমরা কিছুতেই আমাকে ধরে রাখতে পারবে না। 

আমি মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছি আর মা তখন আমার মোবাইল নিয়ে বাবার কাছে কল দিয়ে বললো " তুমি কোথায়? তাড়াতাড়ি বাসায় আসো তো, রুহি খুব ভয় পাচ্ছে। " 

- মা আমাকে সান্তনা দিয়ে বললো, রান্না করা প্রায় শেষ হয়ে গেছে, আমি ভাতের মাড় গালতে যাবো। তুমি কি আমার সঙ্গে রান্নাঘরে যাবি?

- না, আমি কোথাও যাবো না, রুম থেকে বের হয়ে কোথাও যেতে চাই না। 

- ঠিক আছে তাহলে রুমে থাক, দারোগা সাহেব আসুক তারপর কথা বল। 

- তাকে দেখলে আমার আরও ভয় লাগে, আমি কথা বলতে পারি না। 

- পুলিশ দেখলে এমন একটু হয়। 

মা রুম থেকে বের হতেই বাড়ির উঠোনে বাইকের শব্দ শোনা গেল, মনে হয় দারোগা সাহেব এসেছে। আমি তাই চোখ মুছে ভালো করে বিছানায় বসে পরলাম, একটু পরে তিনি প্রবেশ করলেন। 

- কি খবর রুহি? তোমার মা বলছিল তুমি নাকি খুব ভয় পেয়েছ, ঘটনা কি? আমি তো তোমাকে বলেছি যে আমি থাকতে কিছু হবে না। 

- স্যার গতকালও তো বলেছিলেন যে আর কেউ খুন হবার আগেই খুনি গ্রেপ্তার হবে, কিন্তু সামিয়া তো ঠিকই খুন হয়েছে। 

- সামিয়া আমাদের আয়ত্তের বাইরে ছিল কারণ আমরা তো জানতামই না তার কথা। কিন্তু সকাল বেলা থানায় খবর গেল যে সামিয়া নামের একটা মেয়ে মিরপুরে খুন হয়েছে। তারা নাকি গত দুদিনে এই এলাকার খবর কিছুটা জানে, হয়তো ভাবতে পারে নাই তাদের সঙ্গে এমনটা হবে। আর গতকাল যখন সামিয়া খুন হয়েছে তখনই তাদের মধ্যে আফসোসের সীমা নেই। 

- স্যার আপনি যেন কি বলতে এসেছেন সাজু ভাইয়ের বিষয়? 

- আচ্ছা তুমি তাকে চেনো কীভাবে? 

- আমি মাঝে মাঝে তার গল্প পড়তাম, কিন্তু স্যার তার সঙ্গে এই এলাকার কি সম্পর্ক? সাজু ভাইয়ের বাড়ি তো বাগেরহাট জেলা। 

- সাজুদের সঙ্গে আমার পরিচয় আরও কয়েক বছর আগে, এই ধরো ৪/৫ বছর। তখন আমি খুলনার খালিশপুর থানায় পোস্টিং ছিলাম, আর সেই সময় ওদের সঙ্গে পরিচয়। থানার সামনে এক চায়ের দোকানে গভীর রাতে ওরা চার বন্ধু মিলে চা পান করতে আসতো। আমার যখন রাতে ডিউটি থাকতো তখন ওদের সঙ্গে দেখা হতো, আস্তে আস্তে সেই দুরের অপরিচিত শহরে তারা হয়ে গেল পরিচিত বন্ধুর মতো। 

- ওহ্ আচ্ছা, আপনি কি তাদের বন্ধু শফিক ভাই কে চিনতেন? যিনি মারা গেছে। 

- তুমি শফিকের নামও জানো? হ্যাঁ তাকেও চিনি কিন্তু সে হঠাৎ করে একটা দুর্ঘটনায় মারা গেল। 

- কীভাবে? 

- সে অনেক কথা, এখন সেসব বলে সময় নষ্ট করতে চাই না। 

- ঠিক আছে, স্যার আপনি বলেছিলেন যে এবার খুনি ধরা পরে যাবে, কিন্তু কীভাবে? আর আমার সঙ্গে সাজু ভাইয়ের যোগাযোগ আছে সেই কথা আপনি জানলেন কীভাবে? 

- সাজুর সঙ্গে আজকে কথা হলো, আমিই কল দিছিলাম একটা গোয়েন্দার জন্য। খুলনা যখন ছিলাম তখন সেই লোকটা চারটা খুনের রহস্য বের করে দিয়েছিল। সেই লোকটার বাড়ি সাজুর এলাকায় তাই ওর সঙ্গে বেশ ভালো সম্পর্ক, আমি সেই লোকটাকে আনতে চাই। সেই গোয়েন্দার নাম, মোঃ হাসান। 

- কিন্তু...! 

- আমি সাজুর কাছে কল দিয়ে বললাম যে এই এলাকায় এমন ভয়ঙ্কর ঘটনা চলছে। তারপর সে হঠাৎ করে তোমার কথা জিজ্ঞেস করলো, আমি তো অবাক হয়ে গেলাম। 

- কি জিজ্ঞেস করেছিল স্যার? 

- আমাকে হুট করে বলে, " বান্ধবীদের মধ্যে রুহি নামের কোন মেয়ে আছে নাকি? " আমি তো তখন থ হয়ে গেলাম কারণ তোমাকে চিনে কীভাবে? পরে জানতে পারি যে তুমি নাকি গল্পের মাধ্যেমে তাকে চেনো এবং পরশু নাকি কথা হয়েছিল। 

- হ্যাঁ, আমি তাকে বলেছিলাম যে আমার একটা বান্ধবী খুন হয়েছে এবং দ্বিতীয় খুনের ব্যাপারেও তিনি হয়তো জানেন। 

- আচ্ছা ঠিক আছে, এবার শোনো। 

- বলেন স্যার। 

- সাজু বলেছে সেই গোয়েন্দাকে সঙ্গে নিয়ে সাজু নিজেই আসবে এখানে, তাই আমি তোমাকে সে সময় বলেছিলাম খুনি শীঘ্রই ধরা পরবে। 

- তাই যেন হয়, আমার খুব ভয় করছে স্যার, আর ওদের তিনজনের জন্য কষ্ট হচ্ছে খুব। 

- যা হবার ছিল তাতো হয়ে গেল, আমরা প্রশাসন থেকেও কিছু করতে পারি নাই। কিন্তু ভবিষ্যতের অপরাধ গুলো আটকাতে আপ্রাণ চেষ্টা করবো, তবে তোমার কাছে অনুরোধ রইল তুমি বাড়ি থেকে বের হবেই না। 

- জ্বি স্যার। 

- তোমার মতো তোমার বাবাও খুব ভয়ে আছেন, গতকাল তোমার বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল। বললো " স্যার দয়া করে আমার মেয়ে টাকে বাঁচানোর ব্যবস্থা করুন। " আমি বললাম যে, " বাঁচানোর মালিক আল্লাহ, আমরা শুধু চেষ্টা করে যাবো এতটুকুই। তাই আল্লাহর কাছে যেন সবাই দোয়া করেন। "

- সাজু ভাই কবে আসবে বলেছে? 

- আজকে সন্ধ্যার দিকে আসার কথা তবে রাতও হয়ে যেতে পারে। 

- তারা কোথায় থাকবে? 

- কেন দেখা করবে নাকি? 

- আমি এবার ভয়ের মাঝেও ফিক করে হেসে দিয়ে বললাম, হ্যাঁ দেখা করবো। 

- চিন্তা করিও না, সাজু নিজেই সেই গোয়েন্দাকে নিয়ে তোমার কাছে আসবে। কারণ অনেক কিছু জিজ্ঞেস করতে পারে তারা। 

- তাহলে স্যার মেলা মেলা ভালো হবে।

- আমি চেয়ারম্যান সাহেবের সঙ্গে কথা বলেছি, তিনি বলেছেন যতদিন রহস্যের উন্মোচন না হয় ততদিন সাজু ভাই ও গোয়েন্দা হাসান সাহেব তাদের বাড়িতে থাকতে পারবে। 

- তাহলে তো ভালোই হবে। 

- হ্যাঁ, আচ্ছা ঠিক আছে আমি তাহলে এবার চলি, তারা আসার পরে যদি তোমার সঙ্গে দেখা করতে চায় তাহলে তোমাকে কল দিয়ে জানিয়ে তারপর নিয়ে আসবো। 

- জ্বি স্যার, আগে একটু জানাবেন কারণ সাজু ভাই আসলে একটু আলাদা আপ্যায়ন করার খুব ইচ্ছে আছে। 

- ঠিক আছে ঠিক আছে। 

- - - - - 

অনলাইনে গিয়ে সাজু ভাইয়ের বন্ধু সজীবকে এক্টিভ দেখে নক দিলাম। 

- আসসালামু আলাইকুম। 

- নো রিপ্লাই। 

- কেমন আছেন? 

- নো রিপ্লাই। 

- কি ব্যাপার কথা বলছেন না কেন? আমি খুব টেনশনে আছি, আমার বান্ধবীরা এক এক করে খুন হচ্ছে। জানি না কখন জানি সকাল বেলা সবাই আমার মৃত্যুর খবর শুনতে পাবে। 

- এবার রিপ্লাই আসলোঃ- দোয়া করি আপনার কিছু হবে না, সাবধানে থাকবেন আর আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। 

- আপনি কেমন আছেন বললেন না তো। 

- সেটা নাহয় নাইবা বললাম। 

- কেন? আপনি কি রেগে আছেন? 

- না, রাগ করবো কেন? 

- তাহলে কথা বলতে চাননা কেন? আমি কি কোন অপরাধ করেছি? 

- না। 

- তাহলে? আপনি তো জানেন আমাদের এখানে কি ভয়াবহ পরিস্থিতি তবুও কেন এমন করে কথা বলছেন? 

- একটা কথা বলবো? 

- জ্বি বলেন। 

- কথাটা কাউকে বলতে পারবেন না, পেটের মধ্যে হজম করতে হবে। 

- আপনি নিশ্চিন্তে বলতে পারেন। 

- সাজু আমাকে আপনার সঙ্গে কথা বলতে মানা করেছে, তাই এড়িয়ে যাচ্ছি। 

- কি? সাজু ভাই নিষেধ করেছে? 

- হ্যাঁ। 

- কিন্তু কেন? 

- জানি না, শুধু বলেছে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিতে হবে। সাজু বললো " সজীব তুই আমার বন্ধু তাই আমি চাইনা এসবের মধ্যে তুই জড়িয়ে যাস। আমি সবসময় চাই এসব থেকে তোকে দুরে রাখতে, তাই যোগাযোগ বন্ধ কর। "

- কিন্তু কিসের সঙ্গে জড়িত হবার বিষয়? 

- জানি না আমি। 

- আপনি দয়া করে যোগাযোগ বন্ধ করবেন না, সাজু ভাইকে আমার কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছে। প্লিজ আপনি তাকে কিছু বলবেন না, আর আমরা যে যোগাযোগ করবো সেটা তাকে দুজনের কেউ বলবো না। 

- তোমার সঙ্গে দেখা হলেও বলবে না। 

- মানে? 

- সাজুর সঙ্গে কথা হয়েছে আমার, তোমাদের এলাকায় হাসান ভাইকে নিয়ে যাচ্ছে সেটা ওর মুখেই শুনলাম। 

- আর কিছু বলে নাই? 

- না, আরেকটা কথা বলবো? 

- জ্বি বলেন। 

- সাজু তোমাদের এলাকায় গেলেও তার সঙ্গে দেখা করতে যেও না। যদি অনিচ্ছা সত্ত্বেও দেখা করতে হয় তাহলে বেশি কথা বলবো না। 

- কেন? 

- ওকে আজকাল বড্ড অদ্ভুত লাগে, মনে হচ্ছে সেই সাজু নেই। একসময় মেসের রুমের মধ্যে বসে কত হাসিতামাশা করেছি আর আজ সবকিছু যেন অচেনা অজানা মনে হয়। 

- ঠিক আছে আপনার কথা মনে থাকবে। 

- আচ্ছা ভালো থাকবেন। 

- আপনিও ভালো থাকবেন সবসময়। 

- - - - -

চিন্তা সবকিছু এলোমেলো করে দিচ্ছে, বাবার সঙ্গে গিয়ে কলপাড়ে গোসল করলাম। কেমন এক আতঙ্ক উৎকন্ঠা ঘিরে আসছে চারিদিকে, অন্ধকার যেন তিমির কাঁপিবে গভীরে। 

বিকেলে নিজের রুমে শুয়ে ছিলাম, হঠাৎ করে মা এসে বললো " চেয়ারম্যান সাহেবের মেয়ে পারুল আপা এসেছে আমাদের বাড়িতে। " একটু পরে পারুল আপা আমার রুমে এলো, আমি তাকে বসতে দিলাম বিছানায়, মা চলে গেল তার কাজে। 

পারুল আপা আমাদের চেয়ে দুই বছরের সিনিয়র তবে পড়াশোনা করেন ঢাকা শহরে। খুব ভালো ছাত্রী, তাই শহরে থেকে অনার্স করছেন তিনি। 

- কেমন আছো রুহি? 

- জ্বি আপু চলছে, সবকিছু তো জানেন তাই কি আর বলবো বলেন? 

- হ্যাঁ সেটাই ভাবছিলাম, তোমাদের ব্যাচের সকল মেয়ের জন্য গ্রামবাসী আতঙ্কিত হয়ে গেছে। 

- দারোগা বললেন যে গোয়েন্দা আসবে, আর আপনাদের বাড়িতে নাকি থাকার ব্যবস্থা হবে? 

- হ্যাঁ ঠিকই শুনেছ, বাবা অবশ্য আপত্তি করেছিল কিন্তু আমি তাকে রাজি করালাম। যেভাবেই হোক এর একটা নিষ্পত্তি করতে হবে, এভাবে তো কেউ অপরাধ সহ্য করতে পারে না। 

- জ্বি আপু। 

- আচ্ছা ঠিক আছে, আমি আজকে উঠি রুহি। আবার আসবো তোমার সঙ্গে দেখা করতে, আে ভয়ের কিছু নাই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। 

- দোয়া করবেন আমার জন্য। 

- অবশ্যই। 

সন্ধ্যার একটু আগেই বাবা বাড়িতে ফিরলেন কিন্তু তার সঙ্গে আমার বান্ধবী ফারজানা। আমি আর মা দুজনেই অবাক হয়ে গেলাম, যেখানে আমি ঘর থেকে বের হচ্ছি না সেখানে ফারজানা সন্ধ্যা বেলা আমাদের বাড়িতে? কিন্তু পরক্ষণেই বাবার কথা শুনে সবকিছু বুঝতে পারছি। 

ফারজানাদের বাড়ি খুবই পুরাতন, স্কুলে থাকার সময় ওকে সবাই খুব অপছন্দ করতো। মাঝে মাঝে ও আমাকে বলতো " দেখ রুহি, আমি গরীব সেটা কি আমার দোষ? সবাই কেন এমন করে আমার সঙ্গে? " ওদের ঘরবাড়ি এখনো আগের মত পুরাতন, ফারজানা কলেজে ভর্তি হবার পরে ঢাকা গিয়ে গার্মেন্টসে চাকরি নেয়। পরিবারের জন্য টাকা উপার্জন করে সাহায্য করে। কিন্তু সে মাসখানেক আগে চাকরি ছেড়ে বাড়িতে এসেছে, বিয়ের কথাবার্তা চলে। এখন চারিদিকে এতটা ভয়াবহ পরিস্থিতি তাই ফারজানাকে তার বাবা আমাদের বাড়িতে পাঠিয়েছে। 

আমার সঙ্গে থাকবে, যাতে করে মোটামুটি একটু নিরাপত্তা ব্যবস্থা পায়। তাছাড়া ওর বাবা নাকি জানতে পেরেছে যে দারোগা সাহেব আমাদের বাড়িতে বারবার আসেন। তাই তাহার ধারণা হচ্ছে যে আমাদের বাড়িতে যেহেতু দারোগার আনাগোনা তাই এ বাড়িতে কেউ আসবে না। 

কিন্তু আমার কাছে ব্যাপারটা মোটেই স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না, ফারজানা কেমন যেন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে। আসার পর শুধু কেমন আছি সেটা ছাড়া আর কিছু জিজ্ঞেস করে নাই। আমার রুমে ঢুকে চারিদিকে ভালো করে তাকাচ্ছে, মনে হচ্ছে সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। 

- আমাকে বললো, আচ্ছা রুহি, তোমার রুম থেকে রাতে বাহিরে বের হওয়া যায়? 

হঠাৎ করে আমার মনটা আৎকে উঠলো, এমন প্রশ্ন করছে কেন? ঘটনা কি? 
মনে মনে ভাবলাম " আচ্ছা গরীব বলে ক্ষেপানোর জন্য ফারজানা আমাদের সবার উপর প্রতিশোধ নিচ্ছে নাকি? আজকে রাতে কি আমাকে চতুর্থ শিকার করতে এসেছে? " 

নিজের ভাবনার কথা মা-বাবার সঙ্গে বলতে গিয়ে আবার বলতে পারি নাই। রাতে ফারজানার সঙ্গে আমাকে আমার রুমে ঘুমাতে হচ্ছে, খুব যেন ভয় লাগছে আরো। দারোগা সাহেব কল দেননি, সাজু ভাই আর তার বন্ধু এসেছে কিনা জানা হলো না। 

টেনশনে কিছুতেই ঘুম আসছিল না, ফারজানা একটু পর পর ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করে আমি কি ঘুমাইছি নাকি? আচ্ছা এটা জিজ্ঞেস করে কেন? 

কখন ঘুমিয়ে পরেছিলাম জানি না কিন্তু আচমকা ঘুম ভেঙ্গে গেল, বাহিরে শুনশান নীরবতা। কেবল রাতের পোকামাকড়ের ডাক শোনা যাচ্ছে কানের মধ্যে। 

হঠাৎ করে ঘাড় ফিরিয়ে দেখি আমার পাশে কেউ নেই, আরে ফারজানা গেল কোথায়? আমি ডাক দিতে গিয়েও মুখ দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না, রুমের মধ্যে অন্ধকারে কিছু বোঝা যাচ্ছে না। তবে দরজা খোলা সেটা বোঝা যাচ্ছে, আমি কি বপদে পরতে যাচ্ছি? 

,
,
,
,

চলবে...
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 3 users Like Bangla Golpo's post
Like Reply
#6
ভালো হয়েছে থ্রিলারটা ধরে রাখবেন এই ভাবেই।
horseride আমাকে আমার মত থাকতে দাও horseride
[+] 1 user Likes Boti babu's post
Like Reply
#7
গল্প যতটুকু পড়েছি খুব ভালো লেগেছে, এর পরের আপডেট পড়ার জন্যে অপেক্ষায় থাকবো।
[+] 1 user Likes pradip lahiri's post
Like Reply
#8
(01-12-2022, 10:48 PM)Boti babu Wrote: ভালো হয়েছে থ্রিলারটা ধরে রাখবেন এই ভাবেই।





ধন্যবাদ আর চেষ্টা করবো।
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#9
(02-12-2022, 02:30 PM)pradip lahiri Wrote: গল্প যতটুকু পড়েছি খুব ভালো লেগেছে, এর পরের আপডেট পড়ার জন্যে অপেক্ষায় থাকবো।





ধন্যবাদ সাথে থাকুন।
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
#10
  
 

পর্ব-০৪




ভয়ে থরথর করে কাঁপছি, অন্ধকারের মধ্যে চোখ যেদিকে যায় সেদিকেই মনে হচ্ছে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। নিজের নিশ্বাসের শব্দ নিজের কানে পৌঁছে যাচ্ছে, ঘরের মধ্যে দেয়াল ঘড়ির কাঁটার শব্দটাও ভয়ংকর লাগছে। মনে মনে ভাবলাম যে এক লাফ দিয়ে উঠে দরজা বন্ধ করে দেবো কিন্তু হাতপা নড়াতে পারি না। কেমন বিপদের মধ্যে পরলাম? 

বহুকষ্টে বিছানা থেকে উঠে বসলাম, মশারী উঁচু করে ধরে বের হলাম। খাট থেকে নেমে নিঃশব্দে পা টিপে টিপে দরজার কাছে গেলাম। আস্তে করে দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে ধুম করে ছিটকিনি ভেতর থেকে বন্ধ করে দিলাম। মনের মধ্যে থেকে কিছুটা ভয় কেটে গেছে কিছু আতঙ্ক তো রয়ে গেছে। 

ফারজানা গেল কোথায়? সে কি আমাকে হত্যা করতে এসেছে? ব্যাপারটা এই মুহূর্তে দারোগার সঙ্গে বলতে পারলে ভালো হতো। তাছাড়া সকাল থেকে ফারজানার বিষয় মাথার মধ্যে আসে নাই, যদি আসতো তাহলে অবশ্যই বলতাম।  

অন্ধকারে দাঁড়িয়ে রইলাম, বিছানায় শুয়ে ঘুমের মধ্যে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে না। অথচ একবার যদি ঘুম আসতো তাহলে এমন ভয়ঙ্কর রাত্রি থেকে মুক্তি পেতাম। কিন্তু অপেক্ষার রাত কখনো সহজে অতিবাহিত হতে চায় না। 

দরজায় ঠকঠক হচ্ছে, আমি আরেকবার ভয়ে যেন চুপসে গিয়ে বিছানার সঙ্গে মিশে গেছি। কে এসেছে? ফারজানা নাকি? যে আসে অসুক আমি দরজা না খুলে চুপচাপ বসে রবো, মোবাইল বের করে বাবার নাম্বারে কল দিলাম। যেহেতু মুখ দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না ভয়ে, তাই কল দিলে অন্তত সে বা মা যদি আসে। 

কিন্তু রিসিভ করলো না, এদিকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কে যেন শব্দ করে যাচ্ছে। একটু পরে খুব আস্তে করে কেউ ডাকছে "রুহি দরজা খুলে দাও"

আমি চুপচাপ বসে আছি, গাল বেয়ে পানি পরে যাচ্ছে দরজা খুলে মা-বাবার রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারলে ভালো হতো। এতটা ভয়ে আমি কখনো পরিনি, মনে হচ্ছে আমারও সময় ফুরিয়ে গেছে। কাল সকল বেলা হয়তো মসজিদের ইমাম আমার শোক সংবাদ ঘোষণা করবে। 

এবারে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে কেউ ডাকছে। আপনাদের কাছে আমার রুমের কিছু বর্ননা করা দরকার। যেহেতু গ্রামের বাড়ি তাই আমার রুমটা হচ্ছে ঘরের দক্ষিণ দিকে। একটা দরজা দিয়ে ভিতরের রুমে যাওয়া যায়, আরেকটা দরজা দিয়ে সরাসরি বাহিরে বের হওয়া যায়। একটা জানালা আছে দক্ষিণের বাতাসের আশায়, এখন সেই জানালার পাশে শব্দ হচ্ছে। 

- রুহি আমি ফারজানা, দরজা বন্ধ করে দিয়েছ কেন? দরজা খুলে দাও, খুব ভয় করছে। 

- আমি চুপচাপ। 

- তুমি কি ঘুমিয়ে গেছ? প্লিজ তাড়াতাড়ি করো, বাহিরে গা ছমছম করছে। 

- আমি এবার আস্তে করে বললাম, তুমি বাহিরে কেন গিয়েছ? তুমি নিশ্চয়ই এই খুনগুলাে করছো তাই না ফারজানা? তোমাকে আমরা সবাই গরীব বলে অবহেলা করতাম আর তুমি তার জন্য আজ এভাবে প্রতিশোধ নিতে এসেছ। 

- ছিহ, কি বলছো রুহি? দেখো আমি নিরাপদের জন্য তোমাদের বাসায় এসেছি কিন্তু এখন এই বাইরে দাঁড়িয়ে খুব ভয় করছে। আমি মোবাইলে কথা বলার জন্য বাহিরে বের হইছিলাম, প্লিজ রুহি বিশ্বাস করো আমাকে। 

- মোবাইলে কি ঘরের মধ্যে বসে কথা বলা যায় না তাই না? না না না, আমি কিছুতেই দরজা খুলবো না, তুমি খুব খারাপ মেয়ে। 

- এমন করে অবিশ্বাস করো না রুহি, তোমাকে যে কীভাবে বিশ্বাস করাবো। হায় আল্লাহ। 

- তুমি বাহিরে মরে গেলেও আমি দরজা খুলতে পারবো না, মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে তুমি আমাকে দিয়ে দরজা খোলাবে। তারপর ভিতরে ঢুকে খুন করবে আমাকে, আমি খুলবো না দরজা। 

- আচ্ছা তোমাকে খুন করতে চাইলে আমি তো আগেই করতে পারতাম তাহলে বাহিরে বের হওয়া লাগে কেন? 

- নিশ্চয়ই অস্ত্র আনতে গিয়েছ, কারণ তখন তো বাবার সঙ্গে অস্ত্র আনতে পারো নাই। 

- এসব কি বলছো রুহি?

- ঠিকই বলছি, তোমাকে আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারি না। 

- ঠিক আছে তাহলে আমি বাইরে দাঁড়িয়ে থাকি। 

- - - -

বাহিরে এখন নিঃশব্দ, চলে গেছে নাকি? আচ্ছা সে এখন কোথায় যাবে? আর ফারজানা নিজেই কি এতকিছু করছে? 

নিস্তব্ধ রাতের অন্ধকারে হাজার প্রশ্ন জমা হচ্ছে মাথার মধ্যে, গভীর রাতে নিজের মৃত্যু খুব নিকটে দেখতে পেলে কতটা ভয় লাগে সেটা বুঝতে এখন পারছি। এমন জীবন ও মানুষের থাকে? যে জীবন এ এখন প্রতিটি মুহূর্তে আতঙ্ক সেই জীবন কেউ কি কামনা করে? 

ভয়ে আর আতঙ্কে কখন ঘুমিয়ে পরেছিলাম জানি না, সকাল বেলা দরজা ধাক্কা এবং মায়ের চিৎকার শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেল। ভেন্টিলেটরের আধভাঙ্গা ফাঁকা দিয়ে বাহিরের আলো ঘরভর্তি হয়ে গেছে। পরক্ষণেই বাহিরে খুব মানুষের চেচামেচি শুনতে পাচ্ছি, আরে এত মানুষের আওয়াজ কেন? 

তাড়াতাড়ি করে দরজা খুলে দেখি মা, ফুফু, আর প্রতিবেশী ৭/৮ জন মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। সবাই কেন দাঁড়িয়ে আছে বুঝতে পারছি না, কিন্তু মায়ের কথা শুনে স্তব্ধ হলাম। 

- রুহি তুই ঠিক আছো? 

- আমি মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে বললাম, হ্যাঁ মা ঠিক আছি। সময় বুঝে দরজা বন্ধ করেছিলাম নাহলে ফারজানা আমাকে মেরে ফেলতো। 

মা হাত দিয়ে আমাকে সরিয়ে তার মুখের সামনে ধরে বললোঃ-

- ফারজানা মেরে ফেলতো মানে কি? 

- মা জানো? গতকাল রাতে ফারজানা দরজা খুলে বাহিরে বের হয়ে গেছে তারপর নিশ্চয়ই সে কিছু করতেছিল। 

- কি বলছিস তুই? ফারজানা রাতে কীভাবে বের হয়ে গেল? তুই জানিস ফারজানার লাশ পাওয়া গেছে আমাদের বাগানে? 

আমি মুখে হাত দিয়ে চোখ দুটো বিশাল বড় বড় করে তাকিয়ে রইলাম। ফারজানা রাতে খুন হয়েছে নাকি? তারমানে আমার জন্য মারা গেল? আমি যদি ঘরের দরজা খুলে ভিতরে আনতাম তাহলে সে বেঁচে থাকতো? 

- মা বললো, সকাল বেলা ওর লাশ দেখেই তো গ্রামের মধ্যে হইহট্টগোল হয়ে যাচ্ছে। তোকে তো অনেকক্ষণ ধরে ডাকছি কিন্তু তোর কানে ডাক পৌঁছে নাই মনে হয়। 

আমি দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে বাগানের দিকে গিয়ে দেখি ফারজানা শুয়ে আছে। গলার ওড়না দিয়ে ফাস দিয়ে তাকে খুন করা হয়েছে, যে মেয়ে গতকাল রাতে আমার সঙ্গে ঘুমাতে চাইল সেই মেয়ে এখন কবরের জন্য তৈরী হচ্ছে। 

এরমধ্যে গ্রামের অসংখ্য মানুষ এসে হাজির হয়ে গেছে, আমি রাতে ক্লান্ত হয়ে কখন ঘুমিয়ে পরেছি তাই হয়তো সকালে ভাঙ্গে নাই। দারোগা সাহেব নিজেও দাঁড়িয়ে আছে পায়ের কাছে, ফারজানার বাবা বিমর্ষ মুখে বসে আছে আর ওর মা কান্না করে করে অজ্ঞান হচ্ছে। মহিলারা তাকে শান্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন, সবাই আমার দিকে কি এক কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে রইল। অপরিচিত দুজন মানুষকে দেখা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে একজন আমার দিকে বারবার তাকাচ্ছে আর অপরজন ফারজানার লাশটা মনোযোগ দিয়ে দেখছে। 

এমন সময় দুজন কনস্টেবল একটা ভ্যানগাড়ি নিয়ে এলো এবং ফারজানা প্রাণহীন দেহটা ধরে উঠিয়ে নিল। চতুর্থ শিকার হয়ে গেল ফারজানা, তবে তার পিছনে আমার নিজেরও এখন অনেক দোষ মনে হচ্ছে। 

লাশ নিয়ে যাবার পরে আস্তে আস্তে ভিড় কমে গেল, দারোগা সাহেব আমাকে উদ্দেশ্য করে সেই অপরিচিত দুজনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। 
যে লোকটা আমার দিকে বারবার তাকাচ্ছে সেই লোকটা সাজু ভাই এবং লাশ মনোযোগ দিয়ে দেখা লোকটা হচ্ছে গোয়েন্দা হাসান। 

আমরা বাড়ির মধ্যে এসে বসলাম, বাবা মা এবং আরো অনেকেই আছে। হাসান সাহেব আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন;-

- আমি সকাল থেকে যতটুকু জানতে পেরেছি তাতে করে ফারজানার থাকার কথা ছিল আপনার রুমের মধ্যে। কিন্তু সেটা নাহয়ে আপনাকে পাওয়া গেল রুমের মধ্যে দরজা লাগিয়ে ঘুমিয়ে আছেন, আর ফারজানাকে পাওয়া গেল বাগানের মধ্যে প্রকৃতির মাঝে ঘুমিয়ে আছে। আপনারা দুজনেই ঘুমিয়ে ছিলেন, কিন্তু আপনার ঘুম ভেঙ্গে গেল আর সে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়ে গেছে। এই বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি? 

- আমি ভিত হয়ে গেলাম, তারপর ঢোঁক গিলে বললাম, আমরা দুজনে ঘুমিয়ে ছিলাম কিন্তু হঠাৎ করে ঘুম থেকে উঠে দেখি ফারজানা বিছানার মধ্যে নেই। দরজা খোলা ছিল আর তাকে কোথাও দেখা গেল না, আমি ভয় পেয়ে গেলাম কারণ ভেবেছিলাম ফারজানা আমাকে খুন করবে। তাই তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ করে দিলাম। 

- এটা কোন কথা? সেই মেয়ে আপনাকে পরে কি আর ডাকে নাই? 

- হ্যাঁ ডেকেছিল কিন্তু আমি দরজা খুলিনি। 

- কেন? 

- ওই যে ভেবেছিলাম ও খুন করতে চায়, কিন্তু এখন তো দেখি ফারজানা নিজেই খুন হয়েছে। 

- কিন্তু আমি অন্যকিছু ধারণা করছি। 

- মানে? 

- ফারজানাকে আপনি খুন করেছেন? 

- মানে...? 

দারোগা সাহেবসহ উপস্থিত সবাই নড়চড়ে গেল, সবাই এখন নতুন কিছু কৌতূহল দেখতে পাচ্ছে। সাজু ভাই নির্বিঘ্নে বসে আছে, দারোগা সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললাম:-

- স্যার উনি এসব কি বলছেন? 

- হাসান সাহেব বললো, দারোগা সাহেবের দিকে তাকিয়ে লাভ নেই মিস রুহি। আমি ঠিক যেভাবে প্রশ্ন করি সেভাবে জবাব দিবেন প্লিজ, আপনার দিকে এখন সম্পুর্ণ সন্দেহ যাচ্ছে। 

- বাবা বললো, কিন্তু স্যার কেন? আমার মেয়ে নিজেই জীবনের ভয় কান্না করছে আর আপনি সেখানে উল্টো তাকে দোষ দিচ্ছেন? 

- জ্বি আঙ্কেল, আপনি বিবেচনা করুন, দুজনেই একসাথে রাতে রুমের মধ্যে ছিল কিন্তু সকাল বেলা একজনের লাশ পাওয়া গেল। আর এদিকে আপনার মেয়ে দরজা বন্ধ করে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে ছিল রুমের মধ্যে। 

- তাই বলে... 

- আঙ্কেল, মোটামুটি বোঝা যাচ্ছে বা সবাই এটাই বলবে যে আপনার মেয়ে ফারজানাকে নিয়ে বের হয়েছে। এবং সুযোগ বুঝে পিছন থেকে ওড়না দিয়ে শ্বাস বন্ধ করে মেরে ফেলেছে। 

- আমি চিৎকার দিয়ে বললাম, চুপ করুন। এসব বাজে কথা বলবেন না দয়া করে, আমি কেন খুন করতে যাবো? আমি তো নিজেই মৃত্যুর ভয়ে প্রহর গুনে যাচ্ছি। ( কথা গুলো বলতে গিয়ে আমার কণ্ঠরোধ হয়ে গেল, কান্না বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে। এদিকে সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।) 

- হাসান সাহেব বললো, উত্তেজিত হচ্ছেন কেন? আমি তো সরাসরি আপনাকেই দোষারোপ করি নাই কিন্তু সন্দেহের তালিকায় এক নম্বরে স্থান দিলাম। 

- বিশ্বাস করুন আমি কিছু করিনি, ফারজানা তো বারবার দরজা খুলতে বলছিল কিন্তু আমি তাকে খুনি ভেবেছিলাম। 

- আপনার সঙ্গে এখন এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই না, ফারজানার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসলে আমি বাকি কথা বলবো। কারণ আমার মনের মধ্যে অনেকগুলো প্রশ্ন জমেছে, তাই সেই জবাবগুলো পাওয়া গেলে রহস্যের উন্মোচন হবে আশা করি। তাই আপাতত আপনি বাড়িতে থাকুন তবে আমি যেকোনো সময় আপনার সঙ্গে দেখা করতে আসবো। 

- দারোগা বললেন, রুহি তুমি কোন কিছু গোপন করার চেষ্টা করবে না তাহলে কিন্তু আমাদের খুব হয়রানি হবে। যা কিছু জানা আছে এবং পরবর্তী সময়ে জানবে, সেগুলো আমাদের বলবে। 

- ঠিক আছে স্যার, কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি কিছু করি নাই, আমার এতটা সাহস নেই। 

এমন সময় ঘরের মধ্যে এসে পারুল আপা প্রবেশ করলেন, বোরকা পরিহিত তবে বোঝা যাচ্ছে বাজারে গেছিলেন। তিনি সাজু ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো;-

- অনেক কষ্ট করে আপনাদের জন্য লোকটার ঠিকানা বের করেছি। 

- সাজু ভাই বললেন, কোই দেখি? 

- দারোগা বললেন, কিসের ঠিকানা? 

- সাজু ভাই বললো, আপনাকে তো গতকাল রাতে বললাম যে আমাদের বাইকের ইঞ্জিনের মধ্যে কি একটা শব্দ হচ্ছে। তাই তাকে সকাল বেলা আমি বলেছিলাম যে গ্রামের মধ্যে ভালো বাইক ঠিক করতে পারা কেউ আছে নাকি? কিন্তু উনি যে এত কষ্ট করে মেকানিজের কার্ড যোগাড় করবে সেটা জানতাম না। 

পারুল আপা তার ভেনিটি ব্যাগ থেকে একটা কার্ড বের করে দিলেন সাজু ভাইয়ের হাতে। তখন তার ব্যাগ থেকে কি যেন পরে গেল, হাসান সাহেব সেটা হাতে নিয়ে বললো:-

- "দ্রুতগামী" বাসে করেই তো আপনাদের এই এলাকায় আসা যায়, তাই না? 

- দারোগা বললেন, জ্বি হ্যাঁ। 

- আমি সাজুকে বলেছিলাম যে ঢাকায় বাইক রেখে তারপর "দ্রুতগামী পরিবহন" বাসে করে চলে যাই। কিন্তু সাজু বললো " বাইক নিয়ে চলো তাহলে বিভিন্ন যায়গা যেতে সুবিধা হবে। "

হঠাৎ করে আলোচনা ঘুরে গেল, একটু পরে তারা সবাই উঠে দাঁড়াল। উপস্থিত সবাইকে নিয়ে আস্তে আস্তে দারোগা সাহেব বেরিয়ে গেল। যাবার সময় সাজু ভাই আমাকে বললো " ভালো থেকো তুমি, এমন পরিস্থিতিতে তোমার সঙ্গে দেখা হলো তাই তেমন কিছু বলতে পারি নাই। "

- - - - 

সারাদিন অমনি করে কেটে গেছে, আর কেউ আসে নাই সারাদিন। মা-বাবা আরও বেশি চিন্তার মধ্যে পরে গেল, আমিও ভয়ানক চিন্তা করছি। শেষ পর্যন্ত কিনা আমাকেই খুনের অপবাদ দিয়ে গেল তারা? 

মাগরিবের আজানের সঙ্গে সঙ্গে গা ছমছম করা শুরু করেছে, বাবা বাসায় আছে। আমি মা-বাবার সঙ্গে বসে ছিলাম, ফারজানার লাশ দাফন করা হয়েছে আসরের দিকে। 

সম্মুখে আবারও সেই অন্ধকার রাত্রি। তাই রাতের খাবার খেয়ে মা আমার সঙ্গে ঘুমাতে এসেছেন, আতঙ্কিত মনে কিছুক্ষণ আফসোস আর হাহুতাশ করে মাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরার চেষ্টা করতে লাগলাম। 

শেষ রাতের দিকে হঠাত করে মায়ের নড়াচড়া অনুভব করছি এবং ঘুম ভেঙ্গে গেল। তাকিয়ে দেখি মা বিছানা ছেড়ে উঠে যাচ্ছে, এবং যখন দেখলাম ভিতরের দরজা না খুলে ঘরের বাহিরে যাবার দরজা খুলছে তখন আমি বললাম, 

- কোই যাও মা? 

- তুই জেগে ওঠেছিস? চিন্তা করিস না, তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য উঠেছি। তোর জন্য এতো বিপদ ঘুরছে তাই তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে চাই। 

- তাহলে বাহিরে কেন? 

- অজু করতে যাই কলপাড়ে। 

- ঘরের মধ্যে তো বাথরুম আছে তাহলে বাহিরে কেন মা? 

- গতকাল বিকেলে মটর নষ্ট হয়ে গেছে, উপরের টাংকিতে পানি নেই। সন্ধ্যা বেলা একবার মনে করেছিলাম এক বালতি পানি এনে রাখবো কিন্তু পরে ভুলে গেছি। তুই চিন্তা করিস না আমি অজু করেই আসবো, ঘুমা তুই। 

মা বেরিয়ে গেল, কিন্তু অনেকক্ষণ ধরে মায়ের কোন হদিস পাচ্ছি না। কলপাড়ে গিয়ে কল চাপার শব্দ শোনা যাচ্ছে না, তাহলে মা কোই? 

আমার শরীর আবারও ছমছমে হয়ে গেল, আমি শোয়া থেকে উঠে বসলাম। মিনিট পাঁচেক চুপ করে বসে থেকে বিছানা থেকে নামলাম, তারপর দরজার কাছে গিয়ে মা মা বলে আস্তে আস্তে ডাকতে লাগলাম। কিন্তু মায়ের কোন সাড়া পাওয়া গেল না, আমি অনেকটা ভয়ে দরজা থেকে পিছনে ফিরে বিছানায় যেতে লাগলাম। 

কিন্তু হঠাৎ কারো নিঃশব্দে পায়ের আওয়াজ শোনা গেল দরজার সামনে। পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখি কারো ছায়া দাঁড়িয়ে আছে, আমি মা বলে ডাক দিলাম কিন্তু জবাব এলো না। আর তখন সে সামনে এগিয়ে এলো আর আমি ভয়ে ভয়ে উল্টো করে পিছনে পিছনে হাঁটছি। একটু পরে অনুভব করলাম লোকটা তার হাতে একটা রুমাল দিয়ে আমার নাক-মুখ চেপে ধরছে। কোন এক ঘ্রাণে আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, মাথা যেন ঘুরছে সম্পুর্ণ পৃথিবী নিয়ে। আমি কি মারা যাচ্ছি নাকি অজ্ঞান হচ্ছি? 

.
.
.

চলবে... 
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 3 users Like Bangla Golpo's post
Like Reply
#11
 পর্ব-০৫




যখন চোখ মেলে তাকালাম, তখন একটা শক্ত খাটের উপর শুয়ে আছি আমি। বহুকষ্টে বিছানায় উঠে বসলাম, চারিদিকে তাকিয়ে কিছুই যে চিনতে পারছি না। এখানে আমি কীভাবে এলাম? হঠাৎ করে এসব ভাবতেই গতকাল রাতের আঁধারে সেই কথা মনে পরে গেল। 

মা কোথায়? মাকে কি তারা কিছু করেছে? আর আমাকে এখানে কে এনেছে? বিছানা থেকে উঠে দরজার কাছে গেলাম, আগেই বুঝতে পারছি যে দরজা বাহির থেকে বন্ধ। একটা জানালা আছে সেটা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে দেখি অনেক বড় জঙ্গলের মতো দেখা যাচ্ছে। 

ঘন্টা খানিক পরে রুমের মধ্যে একটা ছেলে প্রবেশ করলো, ছেলে নাকি পুরুষ সেটা বোঝা যাচ্ছে না কারণ তার মুখ কালো কাপড় দিয়ে মুড়ানো। এবং সম্পুর্ণ শরীরে কালো পোশাক পরা, তার সঙ্গে যে কি বলবো সেটাই বুঝতে পারছি না। 

- লোকটা বললো, জ্ঞান ফিরেছে তাহলে? তোমার নিশ্চয়ই ক্ষুধা লেগেছে? 

- কে আপনি? আর আমাকে এখানে কেন ধরে নিয়ে এসেছেন? 

- এতো উত্তেজিত কেন? তোমাকে আমরা কিছু করবো না, তুমি খাবে দাবে ঘুমাবে। তোমার সকল বান্ধবীরা মারা যাবার পরে তোমাকে তোমাকে খুন করা হবে। সুতরাং আপাতত তুমি কিছুদিন বেঁচে থাকতে পারবে, যতদিন বেঁচে আছো ততদিনে তোমাকে কেউ অত্যাচার করবে না। 

- আমি দুচোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বললাম, কিন্তু আমরা কি ক্ষতি করেছি। কেন আমাদের এভাবে এক এক করে খুন করছেন আপনারা? আমাদের মা-বাবার কষ্টের কথা চিন্তা করুন। 

- আমাদের একজন নেতা আছে এবং আমরা তার নির্দেশে সবকিছু করে থাকি। তোমাদের দোষ ত্রুটি সবকিছু তিনি জানেন, আমরা তো শুধু তার হুকুম পালন করি। 

- আপনাদের নেতার নাম কি? 

- জানতে চাও? আচ্ছা সমস্যা নেই তুমি জানতে পারবে, তবে বসের কাছে জিজ্ঞেস করে তারপর তোমাকে সবকিছু জানাবো। এখন বলো তুমি কি খাবে? তোমার জন্য যেকোনো খাবারের ব্যবস্থা করতে পারি, এটা বসের হুকুম। 

- মরেই যখন যাবো তখন আর তোমাদের মতো খারাপ মানুষের খাবার খেয়ে লাভ কি? তোমরা খুব খারাপ মানুষ, তোমাদের মা-বাবা যদি মারা গিয়ে থাকে তাহলে তারা কবরে নিশ্চয়ই এগুলোর ফল পাচ্ছে। 

- এতো নীতি গল্প আমাদের কানে যায় ঠিকই কিন্তু আবার বেরিয়ে যায়, সুতরাং শুধু শুধু এসব বলে লাভ নেই তোমার। ঠিক আছে তুমি অপেক্ষা করো আমি নাস্তার ব্যবস্থা করি, রেখে দিয়ে যাবো তুমি ইচ্ছে হলে খেয়ে নিও। 

লোকটা বের হয়ে যাবার পনের মিনিট পরে ফিরে এসে নাস্তা নিয়ে, দরজা খুলে টেবিলের উপর রেখে আবার চলে গেল। কিন্তু দরজা বন্ধ করার আগে মুখ বাড়িয়ে বললো;-

- আমাদের নেতা হচ্ছে তোমার খুবই পছন্দের মানুষ সাজু ভাই। যাকে তুমি কত কৌতূহল নিয়ে দেখতে চাইতে, সেই সাজু ভাই হচ্ছে আমাদের সবার বস৷ তোমাদের সকলের মধ্যে তুমি দেখতে খুব সুন্দরী, তাই হয়তো তোমার উপর কিছু আদর যত্ন হতে পারে। বাকি খুনগুলা করতে বেশ কিছু দিন থাকতে হবে সাজু ভাইকে, তাই এরমধ্যে যদি মনটা খারাপ লাগে তাহলে তোমাকে আদর করতে আসতে পারে। তুমি তৈরী থেকো। 

লোকটা কথাটা বলে দরজা বন্ধ করে চলে গেল, আর আমি আকাশ থেকে পরলাম। সাজু ভাই এসব করেছে? আমাকে এখানে সাজু ভাই ধরে নিয়ে এসেছে? কিন্তু কেন? সাজু ভাই আমাদের সকল বান্ধবীদের কেন খুন করবে? আমাদের কি তিনি চিনেন? যদি না চেনে তাহলে তিনি আমাদের হত্যা করতে চায় কেন? আর আমার আগের চার বান্ধবীকে তো সঙ্গে সঙ্গে হত্যা করেছে তাহলে আমাকে খুন না করে এখানে ধরে এনেছে কেন?
আদর করতে? যে মানুষটা এতো সুন্দর করে গল্প লিখতেন তার মন এত কুৎসিত? এতকিছু করে তিনি কি লাভ পাবেন? 

উপরের এতগুলো প্রশ্নের উত্তর আমি জানি না, আমাকে কখন খুন করা হবে সেটাও বলতে পারি না। হয়তো যেকোনো মুহূর্তে আমাকেও বান্ধবীদের কাছে চলে যেতে হবে। কিন্তু তাদের হাতে খুন হবার আগেই নিজেও আত্মহত্যা করতে পারি। কারণ এখন পর্যন্ত ইজ্জত বেঁচে আছে কিন্তু যদি সত্যি সত্যি শারিরীক নির্যাতন করে তাহলে তো আরও কষ্ট লাগবে। তারচেয়ে নিজের ওড়না দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করতে পারি, যাতে ইজ্জত নিয়ে মরতে পারি। আচ্ছা নিজের ইজ্জত বাঁচাতে যদি আত্মহত্যা করি তাহলে কি পাপ হবে? 

কাগজ ফুরিয়ে গেছে তাই আর বেশি সামনে গিয়ে লাভ নেই। এখানে এসেছি তিনদিন হয়ে গেছে, এখন পর্যন্ত খাচ্ছি আর ঘুমাচ্ছি, আতঙ্কে মৃত্যুর প্রহর গুনে যাচ্ছি। সাজু ভাইয়ের সঙ্গে এখনো দেখা হয় নাই, গ্রামের মধ্যে কি চলছে সেটাও জানি না। আমিও বাঁচবো কিনা জানি না। আমার বিছানার তোষকের নিচে একটা কলম আর এই কাগজটা পেলাম তাই খুনের বিষয় সবটুকু লিখে দিলাম। জানলা দিয়ে জঙ্গলের মধ্যে ফেলে দিচ্ছি, যদি কোন সহৃদয়বান ব্যক্তির হাতে পরে তাহলে আমাদের গ্রামের মধ্যে গিয়ে সবাইকে বলবেন যে সাজু ভাই সবকিছুর জন্য দায়ী। আমি হয়তো বেঁচে থাকতে পারবো না, আর খুনের রহস্য বের হয়েছে নাকি বাকি সবাই খুন হয়েছে? সাজু ভাই কি ভদ্রতার মুখোশ পরে গেল? নাকি তার পাপের বিনাশ হয়েছে? 

আমার লেখাটা পাওয়া মাত্র আপনি এটা নিয়ে আমাদের গ্রামের মধ্যে যাবেন অথবা আমাদের উপজেলার সেই দারোগা সাহেবের কাছে আমার লেখাটা দেখাবেন। ভালো থাকবেন। 

- - - - -

এতক্ষণ ধরে রুহির লেখা কাগজের সম্পুর্ণ লেখা পড়ছিল জামিল নামের একটা ছেলে। সে একজন চোর, গতকাল রাতে পাবলিকের ধাওয়া খেয়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে এই শালবনে ঢুকেছে। সকাল বেলা এই পরিত্যক্ত বাড়িটার কাছ দিয়ে যেতেই কাগজটা চোখে পরে তার। জামিল তখন যাচ্ছিল এবং উপর থেকে কাগজটা পরছিল তার সামনে। সে তখন আৎকে উঠেছে কারণ এখানে কেউ বাস করে জানা ছিল না। 

ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়াশোনা করা জামিল যখন রুহির সেই বান্ধবীদের প্রথম শিকার থেকে চতুর্থ শিকার পর্যন্ত খুন হওয়া পর্যন্ত পড়ছিল তখন তার ভয় করছিল। জামিল একবার মাথা তুলে জানালা বরাবর তাকাল কিন্তু জানালা বন্ধ। প্রথমে সে ভেবেছিল বাড়ির মধ্যে গিয়ে মেয়েটাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। যেহেতু কাগজটা মাত্র উপর দিয়ে পরেছে সেহেতু মেয়েটা এখনো বাড়ির মধ্যে আছে এবং সুরক্ষিত। 

কিন্তু পরক্ষণেই তার মনে হলো এটা কি ঠিক হবে আমার জন্য? এখানে বাড়ির মধ্যে নিশ্চয়ই সেই খারাপ লোকগুলো রয়েছে, তারা যদি জামিলকে মেরে ফেলে তাহলে তো রুহি নামে মেয়েটার এই চিঠি পৌঁছাবে না। তাই এখন সংঘর্ষে না জড়িয়ে বরং চুপিচুপি মেয়েটার এলাকায় যেতে হবে। আর দারোগা সাহেবের কাছে সবকিছু বলে এখানে নিয়ে আসতে হবে। তার মতো চোরের মাথায় এত বুদ্ধি বাহহ, নিজেকে সে প্রশংসা করলো। 

চন্দ্রা থেকে সরাসরি টাঙ্গাইলের বাসে উঠে জামিল রুহিদের উপজেলা থানায় এসে পৌঁছাল। থানায় জিজ্ঞেস করে মোতালেব দারোগাকে খুঁজে বের করলো কারণ রুহি তার নাম লিখেছে। বুকের কাছে নাম লেখা দেখে নিশ্চিত হয়ে নিল যে সত্যি সত্যি তিনি মোতালেব দারোগা। তারপর জামিল চোরা দারোগা সাহেবের কাছে সামান্য বিবৃতি করে জঙ্গলের মধ্যে পাওয়া রুহির কাগজটা দিল। 

দারোগা সাহেব কাগজটা পড়ে থ হয়ে গেল, চোখ বড় বড় করে বললোঃ- 

- জঙ্গলটা কোনদিকে? 

- স্যার আপনি চলেন আমি আপনাদের নিয়ে যাবো সেখানে, মেয়েটা এখনো মনে হয় বেচে থাকতে পারে। 

দারোগা সাহেব তখন জামিল চোরাকে নিয়ে থানা থেকে বের হয়ে গেল। থানার সামনে হোটেলের মধ্যে গিয়ে দুপুরের খাবার অর্ডার করে মোবাইল বের করে সাজুকে কল দিয়ে আসতে বললো। 
জামিল চোরা অবাক হয়ে কিছু একটা বলতে গিয়েও দারোগার চোখের দিকে তাকিয়ে চুপসে গেল। কারণ পুলিশের চোখের দিকে তাকিয়ে সে অনেক কিছু কল্পনা করতে পারে। 

১০ মিনিটের মধ্যে সাজু ভাই এবং হাসান সাহেব সেখানে উপস্থিত হলেন। তারা তখন উপজেলার মধ্যেই ছিল এবং কল পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে চলে তারা এসেছে। জামিল চোরা গতকাল রাত থেকে কিছু খায়নি তাই এখন পেটপুরে খাচ্ছে। দারোগা সাহেব কাগজটা সাজু ভাইয়ের হাতে দিলেন, এবং শুধু শেষে কিডনাপের পর থেকে লেখা অংশ পড়তে বললেন কারণ বাকিটুকু তাদের জানা। সাজু ভাই ও হাসান দুজনেই তবুও সম্পুর্ণ লেখা পড়লো, সাজু ভাই তখন দারোগা সাহেবের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিল। হাসান সাহেব তখন কিছুটা গম্ভীর ভাব নিয়ে মাথা চুলকাতে আরম্ভ করলো। আর মুরগির মাংস দিয়ে খেতে খেতে তাদের সেই তামাশা দেখছিল জামিল চোরা। 

সে ভাবলো, এই সেই সাজু ভাই? ইনি তাহলে মেয়েটাকে সেখানে বন্দী করে রেখেছে? মেয়েটার আর্তচিৎকার কানে যায় না তার? আর দারোগা সাহেব তাহলে খুনের সঙ্গে জড়িত? তিনি কি সকল সাহায্য সহোযোগিতা করছে? 

জামিল চোরা পানি ঢেলে হাত ধুয়ে নিচ্ছে তখন সাজু ভাই ও হাসান সাহেব উঠে দাঁড়াল। তারপর দারোগা সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললো " সময় হলে আপনাকে ডাকবো, এখন চলি অনেক কাজ করতে হবে। "

জামিল বুঝতে পারছে না, সময় হলে ডাকবে এর মানে কি? কাগজটা দিয়ে তিনি কোন ব্যবস্থা না করে সরাসরি খুনির হাতে দিয়েছে তাই তার পুরষ্কার দিবে সাজু ভাই? 

একটু পরে দুজন পুলিশ এসে জামিল চোরাকে ধরে নিয়ে গেল, দারোগা সাহেব তাকে বললো যে তুমি আপাতত হাজতে থাকো। তোমাকে আমরা এই মুহূর্তে বাহিরে ছাড়তে পারবো না, খুব রিস্ক। 

- - - -

রাত বারোটা পেরিয়ে গেছে। 
রুমের মধ্যে বিছানায় শুয়ে ছিল রুহি, হঠাৎ করে দরজা খোলার শব্দে সে লাফ দিয়ে উঠলো। আর দরজার দিকে যখন তাকাল তখন তার চোখ বিস্ময়ে, ভয়ে, আতঙ্কে একদম বন্ধ হয়ে গেল। কিছু একটা বলার জন্য ঠোঁট নড়তে চাইছে কিন্তু সে কিছু বলতে পারছে না। কারণ দরজা খুলে সাজু ভাই প্রবেশ করেছে, এবং তার দিকে তাকিয়ে ভয়ঙ্কর হাসি দিচ্ছে। 

- সাজু ভাই বললো, কেমন আছো রুহি? 

- রুহি বহু কষ্টে বললো, সাজু ভাই.... 

- হ্যাঁ আমি, কেন তোমাকে আমার লোকজন বলে নাই আমার কথা? 

- মানে কি সাজু ভাই? 

- তোমাকে কিসের জন্য যেন তৈরী থাকতে বলা হয়েছে মনে নেই? তুমি তৈরী তো? 

.

.

চলবে... 
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#12
এত ভূল বাংলা চটি গল্পে কোনোদিন দেখিনি।
[+] 2 users Like pradip lahiri's post
Like Reply
#13
৫ নং পর্বটি এডিট করে পুনরায় পোস্ট করুন।
এই পর্বটির আগা-মাথা খুঁজে পড়তে হলে পুনরায় প্রাইমারি স্কুলে যেতে হবে।
[+] 1 user Likes S.K.P's post
Like Reply
#14
এতো পরিমাণ বানান ভুল কি চলছে কি বলছে কোনও আগা মাথা কিছুই বুঝলাম না ।
horseride আমাকে আমার মত থাকতে দাও horseride
[+] 1 user Likes Boti babu's post
Like Reply
#15
(05-12-2022, 12:04 AM)S.K.P Wrote: ৫ নং পর্বটি এডিট করে পুনরায় পোস্ট করুন।
এই পর্বটির আগা-মাথা খুঁজে পড়তে হলে পুনরায় প্রাইমারি স্কুলে যেতে হবে।



নতুন ভাবে পোস্ট করা হয়েছে।
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
#16
আসলে লেখায় লেখক কোনো ভুল করেনি আমার পোস্ট করবার সময় কিছু চেন হয়ে গেছে সে জন্য দুঃখিত সবাই কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

আর নতুন ভাবে পোস্ট করা হয়েছে আরো একবার পর বার জন্য অনুরোধ করছি প্লিজ সবাই পড়ে জানাবেন কেমন হয়েছে।
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
#17
পর্ব-০৬




- ছি সাজু ভাই, আপনার মতো মানুষ এমন কাজ করতে পারে সেটা কোনদিন কল্পনা করিনি। মনের মধ্যে অজস্র নোংরামি নিয়ে কত ভালো ভালো গল্প লিখেন, অথচ আমার মতো নির্বোধ পাঠিকা সেটা জানতেই পারে না। 

- ধুর, তোমার ধারণা ভুল কারণ তুমি আমাকে ঠিক যতটা খারাপ ভাবছো আমি ততটা খারাপ না রুহি। তবে পৃথিবীর সকল মানুষের মধ্যে কিন্তু ভালো এবং খারাপ দুটোই আছে। 

- কিন্তু আপনার মতো ভদ্রতার মুখোশ পরে ঘুরে বেড়ানো ব্যক্তি খুব কম আছে সাজু ভাই। আমি যদি ভুল করেও বেঁচে যাই তাহলে আমি আপনার মুখোশ খুলবোই। 

- তোমাকে আমি মারবো না রুহি, তোমার কোন ক্ষতি হবে না কারণ আমার বন্ধু সজীব তোমাকে পছন্দ করেছে। তাই বন্ধুর পছন্দের মেয়ে হিসেবে তোমাকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই, তবে আজকে রাতে তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যাওয়া হবে। 

- সজীব ভাই? তিনি আমাকে কি কখনো দেখেছে নাকি? যার সঙ্গে আমার পরিচয় এই মাত্র সপ্তাহ খানিক আগে, যিনি এখনো আমাকে দেখেনি সে কীভাবে পছন্দ করে? 

- জানি না, তবে আমাকে বলেছিল যে সে নাকি তোমাকে পছন্দ করেছে। তারপর আমি তাকে কথা বলতে নিষেধ করেছিলাম, কিন্তু আমার মনে হচ্ছে সে তারপরও যোগাযোগ করেছে। 

- আপনাদের কাউকে আমার বিশ্বাস হচ্ছে না, সব গুলো এক একটা হারামি। আপনার ফ্রেন্ডদের মধ্যে সজীব শফিক আপনি সবাই শয়তান, আমি অভিশাপ দিচ্ছি। 

- খবরদার রুহি, শফিক পৃথিবীতে নেই, তাকে নিয়ে কোন বাজে কথা বলবে না। যদি বলো তবে কিন্তু খুব খারাপ হবে, যেটা তুমি কল্পনা করতে পারবে না। 

- কচু হবে, তিনটাকে প্রচুর গালি দিতে ইচ্ছে করে কিন্তু আপনাদের কপাল ভালো যে আমি গালি দিতে পারি না। তবে এটা নিশ্চিত থাকুন আপনার বন্ধু শফিক কবরে শান্তিতে নেই, আপনার মতো মানুষের সঙ্গে যে বন্ধুত্ব করেছে। তার কবরের মধ্যে শান্তি কোনদিন হবে না, শয়তান। 

সাজু ভাই তখন ডান হাত দিয়ে রুহির গালে এক চড় বসিয়ে দিল, রুহি অবাক হয়ে প্রচুর ব্যথা নিয়ে গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে। 

- সাজু ভাই বললেন, খুব বেশি রকমের বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। 

- রুহি চুপ করে বসে রইল, আসলে চড়ের আঘাত খুব জোরে লেগেছে। 

- সাজু ভাই বললেন, তুমি আমার কাছে সেদিন শফিকের মৃত্যুর ঘটনা জানতে চাইছিলে মনে আছে তোমার? 

- রুহি মাথা নেড়ে "হ্যাঁ" বললো। 

- আচ্ছা এখন তোমাকে আমি শফিকের মৃত্যুর ঘটনা বলবো, মনোযোগ দিয়ে শোন। 

সেদিন ছিল শুক্রবার। 
বৃহস্পতিবার আসলেই আমরা রাতে সারারাত তাস খেলতাম, আমি শফিক সজীব আর রকি। চারজনে মিলে খেলতে বসতাম, আমি আর শফিক ছিলাম পার্টনার। শফিক একটা মেয়েকে খুব ভালবাসতো, রাতে ঘুমাতে গিয়ে ঘন্টা খানিক ধরে মোবাইলে কথা বলতো। 

আমরা ঘুম থেকে উঠলাম বারোটার কিছুক্ষণ পর, মসজিদে জুম্মার আজান দিয়েছে। সবাই এক এক করে গোসল করছে, আমি রান্না ঘরে গিয়ে দেখি বিশাল পাঙ্গাশ মাছ কাটা হয়েছে। মাথাটা অনেক বড়, কিন্তু শুক্রবারে সাধারণত গরুর মাংস রান্না হয় তাহলে পাঙ্গাশ মাছ কেন? 

খালা বললো " রাতের জন্য নাকি গরুর মাংস রান্না করা হবে আর দুপুরে মাছ। বাজার করেছে শফিক, আর মাছের মাথা শফিকের প্লেটে যাবে। "

নামাজ পড়ে দোয়া হচ্ছে, জিলাপির ব্যবস্থা আছে তাই শফিক বসে আছে। আমি মিলাদ না পড়ে মেসে গেলাম, রুমের মধ্যে ভাত খেতে বসবো ঠিক তখনই শফিকের প্লেটের মাছের দিকে চোখ পরে। আমি দরজা বন্ধ করে শফিকের প্লেট নিয়ে খেতে আরম্ভ করলাম, শফিক এসে দেখে তো অবাক। সজীব আর রকি দুজনেই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার উপক্রম। শফিক খাবার না খেয়ে মন খারাপ করে শুয়ে পরলো। 

সজীব বললো " কিরে মাছের মাথার চিন্তায় কি খাওয়া বন্ধ নাকি রে? "

শফিক কিছু বলে নাই, তখন আমরা বুঝতে পারি যে আলাদা কিছু হয়েছে। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে জানলাম যে ওর গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে। মেয়ে নাকি কল করতে নিষেধ করেছে আর সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। যেহেতু সেই মেয়ে অনেক দুরে বাস করতো তাই চাইলেই তার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া যায় না। 

আসরের দিকে আমরা ভৈরব নদীর তীরে হাঁটতে গেলাম, শফিক যেতে রাজি নয় তবুও তাকে জোর করে নিয়ে গেলাম। চার বন্ধু সবসময় একসাথে থাকতাম তাই একজনকে মন খারাপ অবস্থায় রেখে স্বার্থপর হতে পারি নাই। যদি স্বার্থপর হতে পারতাম তাহলে হয়তো আজকে শফিক বেঁচে থাকতে পারতো। আমরা নিজেরই ওকে মেরে ফেলেছি, আমরাই দায়ী। 

এতটুকু বলে সাজু ভাই থামলো আর রুহি তখন বললো " মানে কি? "

সাজু ভাই বললেন, 
আকাশ মেঘলা ছিল, নদীতে পানি অনেক বেশি এবং উত্তাল। নদীর মাঝখানে অনেকগুলো ছোট ছোট তেলের জাহাজ ছিল, সেখানে আমার একটা পরিচিত লোক ছিল। তাকে কল দিলাম সে বললো একটা নৌকা নিয়ে মাঝখানে চলে যেতে হবে। আমরা তখন একটা নৌকা নিয়ে জাহাজের দিকে এগিয়ে গেলাম, শফিক যেতে রাজি হচ্ছিল না কারণ সে সাতার জানে না। রকি আর সজীব সেই সময় ওকে নিয়ে হাসতে লাগলো আর শফিক লজ্জা পেয়ে আমাদের সঙ্গে যেতে রাজি হলো। খুলনার খালিশপুরের চরেরহাটে হচ্ছে তিনটা নদীর মোহনা, ঠিক তার মুখেই জাহাজ নোঙর করা ছিল। জাহাজে গিয়ে আমরা প্রথমে চা বিস্কুট খেলাম তারপর সবাই একটু ঘুরলাম। হঠাৎ করে শফিকের একটা কল এলো, মোবাইল নিয়ে সে আমাদের থেকে আলাদা হয়ে গেল। কথা বলতে বলতে সে এদিক সেদিক হাঁটছে, আমরা তখন আমাদের মতো ব্যস্ত। 

রকি বললো "নিশ্চয়ই ওর গার্লফ্রেন্ড কল দিয়েছে শালা নির্লজ্জ, কেন যে মেয়েটার পিছনে এভাবে পরে আছে। "

এমন সময় সাজু ভাই বলে একটা চিৎকার শুনতে পেলাম, তাকিয়ে দেখি শফিক তার স্থানে নেই। জাহাজের একদম উপর একজন ছিল সে তখন চিৎকার দিয়ে বললো "আপনাদের সঙ্গের লোক নদীতে পরে গেছে। " 

একে তো উত্তাল ঢেউ, এদিকে জোয়ারের তীব্র স্রোত ভেসে যাচ্ছে। তখনই শফিক একবার কোন মতে হাপুসহুপুস করে ভেসে উঠলো, আমি সজীব রকি তিনজনেই লাফিয়ে পরলাম। কিন্তু সেই স্রোত এত বেশি ছিল যে স্রোতের সঙ্গে হারিয়ে গেল আমাদের চার বন্ধুর একজন। এমন ছোট্ট নদীর মধ্যে কেউ ডুবে মারা যাবে সেটা হয়তো মানুষ কল্পনা করতে পারবে না। কিন্তু মৃত্যু যদি উপস্থিত হয়ে যায় তাহলে শুধু নদী কেন? হাঁটু সমান পানি হলেও মানুষ মারা যাবে। কারণ মৃত্যুর যমদূতকে কেউ এড়াতে পারেননি এবং পারবে না। 

আধা ঘণ্টা ধরে সাঁতরে তবুও যখন পেলাম না তখন আশা ছেড়ে দিলাম। ইতিমধ্যে ট্রলার খবর দিয়ে এনেছে জাহাজের লোকজনে তাই ট্রলার করে আমরা জাহাজে আসলাম। তিনজনে তিনটি স্থানে বসে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম, যেহেতু কোনকিছু না ভেবেই লাফ দিছিলাম তাই সবার মোবাইল পকেটে ছিল। সজীব রকি দুজনেরটা পরে গেল নদীতে তবে আমারটা ছিল পকেটে। 

আশেপাশের জেলেদের এনে জাল ফেলা হলো, সন্ধ্যা পর্যন্ত অনেক চেষ্টা চললো। সরকারি নৌ বাহিনীর লোকজন ছিল পাশেই, তারাও বোট নিয়ে খুঁজতে লাগলো। আমরা ট্রলার ভাড়া করে বহুদুর খুজতে গেলাম কিন্তু পাইনি। 

- - - - 

চোখের পানি মুছে সাজু ভাই সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেল, রুহির দিকে তাকিয়ে বললো;-

- তোমার জন্য কিছু পোশাকের ব্যবস্থা করতে হবে, এই কদিন একই পোশাকে আছো। তুমি বের হবার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করো, তোমাকে ঢাকায় নেওয়া হবে। 

- আমি আমার বাড়িতে যাবো সাজু ভাই। 

- তোমার বান্ধবীদের খুনি না ধরা পর্যন্ত তোমাকে বন্দী থাকতে হবে। 

- হাহাহা, খুনি নিজেই যদি খুনিদের ধরতে চায় তাহলে তো খুবই হাস্যকর। আচ্ছা একটা প্রশ্ন করতে পারি সাজু ভাই?

- হ্যাঁ করো। 

- শফিক ভাই যার সঙ্গে সম্পর্ক করতেন তার বাড়ি কি আমাদের টাঙ্গাইলে? 

- হ্যাঁ, শফিকের বাবা তোমাদের এই উপজেলায় চাকরি করতো একসময় তখন শফিক এখানে এসেছিল এবং তখনই পরিচয় হয়েছে। 

- আমি সবকিছু বুঝতে পেরেছি। 

- খুব ভালো হয়েছে, এবার আসি। 

সেই রাতেই রুহিকে অজ্ঞান করে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হলো, আর ভোর হবার আগেই তারা রুহির গ্রামের মধ্যে প্রবেশ করলো। 

- - - - -

রুহি যেদিন রাতে কিডনাপ হয়েছিল তার পরদিন সকালে সম্পুর্ন গ্রামের মধ্যে হইচই বেঁধে গেছিল। 
সাজু ভাই আর হাসান সাহেব তাদের বাড়িতে গিয়ে সবকিছু দেখে এসেছিল, দারোগা সাহেব তাদের সঙ্গে ছিল। চেয়ারম্যান সাহেব নিজে এবং তার মেয়ে পারুলও উপস্থিত ছিল। সকলের সামনে দাঁড়িয়ে চেয়ারম্যান খুবই দুঃখ ও লজ্জা প্রকাশ করেছিল। রুহির মাকে পাওয়া গেছিল রান্নাঘরের কাছে কিন্তু রুহিকে পাওয়া যায় নাই। 

ভোরবেলা ঢাকা থেকে ফিরে দারোগা সাহেবের সঙ্গেই সাজু ভাই এবং হাসান সাহেব চেয়ারম্যান বাড়ি প্রবেশ করলো। চেয়ারম্যান সাহেবকে বলা হয়েছে যে সাজু ভাই ও হাসান সাহেব দারোগার বাড়িতে আছে তাই রাতে আসেনি। 

দুজনের চোখে তখন ঘুম টলমল করছে। দারোগা সাহেব, চেয়ারম্যান, পারুল, সাজু ভাই ও হাসান সাহেব একসাথে চা-নাস্তা খেতে বসেছেন। আর খুনের বিষয় নিয়ে সবাই আফসোস প্রকাশ করে যাচ্ছেন। 

- চেয়ারম্যান বললো, চারটা মেয়ে খুন হয়েছে আবার একটা মেয়ে নিখোঁজ। দারোগা সাহেব কিছু তো করতে পারছেন না আপনারা, আমাকে আজ এমপি কল দিয়ে গালাগাল করছে। 

- দারোগা বললেন, দেখুন আপনার সামনেই কিন্তু আমি অনেক দৌড়াদৌড়ি করছি। রাতদিন কত কষ্ট করে ডিউটি করে যাচ্ছি, নাহলে এত সকাল বেলা এখানে আসতাম? 

- কিন্তু সেই কথা অন্য কাউকে কীভাবে বিশ্বাস করাবো বলেন? ছাত্র যতই দিনরাত পড়াশোনা করুক পরীক্ষার খাতায় লিখতে না পারলে তো সে ফেইল। 

এমন সময় বাড়ি কাপিয়ে কান্না করতে করতে রুহির বাবা প্রবেশ করলো। অসুস্থ স্ত্রী আর খুঁজে না পাওয়া মেয়ের শোকে বেচারা কতটা কষ্ট পাচ্ছে সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু কিছু করার নেই তাদের কারণ খুনি ধরা পরে না, সাজু ভাই তো গম্ভীর হয়ে বসে আছে। 

 সরাসরি চেয়ারম্যান সাহেবের পায়ের কাছে বসে পরে রুহির বাবা বললেন:- 

- আমার মেয়ের কোন খবর পেলেন চেয়ারম্যান সাহেব? আজকে আমি আমার মেয়ে ছাড়া এখান থেকে যাবো না, সারাদিন পাগলের মতো খুঁজে খালি হাতে বাড়িতে গিয়ে অসুস্থ স্ত্রীর সঙ্গে ব্যর্থতার জবাব দিতে কষ্ট হচ্ছে খুব।

- চেয়ারম্যান সাহেব বললো, একটু ধৈর্য ধরো তো জসিম উদ্দিন, চেষ্টা করছি আমরা। ( রুহির বাবার নাম মোঃ জসিম উদ্দিন তালুকদার) 

- মেয়ে আমার নিখোঁজ হয়ে গেছে, তার বেদনায় যাতনায় আমার স্ত্রী মরতে বসেছে তবুও আপনি আমাকে ধৈর্য ধরতে বলছেন? 

- এ ছাড়া আর কি বলবো? তুমি বরং তোমার স্ত্রী কে দেখাশোনা করো, আমরা তো তোমার মেয়ে খুঁজে বের করতে মরিয়া হয়ে গেছি। 

- আমি আমার মেয়েকে না নিয়ে বাড়িতে ফিরে যাবো না, আজকে আমার মেয়ে চাই। 

আধা ঘণ্টা ধরে বোঝানোর পরে রুহির বাবা তার মেয়ের শোকে কান্না করতে করতে বেরিয়ে গেল। আর উপস্থিত সবাই যেন একটু থমথমে অবস্থায় বসে রইল। 

- হঠাৎ করে চেয়ারম্যান সাহেব রাগান্বিত হয়ে গর্জে উঠে বললো, নিজের চোখে তো আপনারা দেখলেন বেচারা কতটা কষ্টে কান্না করছে। তবুও কি বলবেন প্লিজ যে কবে নাগাদ একটা ব্যবস্থা করতে পারবেন? দরকার হলে বলেন তাহলে আমি ঢাকা থেকে নতুন করে গোয়েন্দা আসার ব্যবস্থা করবো। 

- সাজু ভাই বললেন, আপনার যা ইচ্ছে করতে পারেন সমস্যা নেই। কিন্তু আপনি যে আর কাউকে আনবেন না সেটা আমরা জানি। 

- মানে কি? কেন আনবো না আমি? আমি কি সবসময় এভাবে মানুষের কথা শুনবো? আচ্ছা আপনারা তো ৩/৪ দিন ধরে ঘুরছেন, সত্যি সত্যি যদি গোয়েন্দা হয়ে থাকেন তাহলে এখনো কি কাউকে সন্দেহ করতে পারেননি? 

- সাজু ভাই বললেন, হ্যাঁ পেরেছি। 

- তাহলে তার উপর নজর রাখেন। 

- রাখছি তো সবসময়। 

- আচ্ছা ঠিক আছে কিন্তু আর কতদিন? আচ্ছা বলেন তো তালিকায় কে কে আছে? নাকি কোন সমস্যা আছে আপনাদের? 

- আমাদের বলতে কোন সমস্যা নেই কিন্তু শুনতে আপনার ভালো লাগবে না।

- তবুও শুনি? সন্দেহের তালিকায় নিশ্চয়ই অনেকেই আছে? 

- হ্যাঁ, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এভাবে। 

- প্রথম সন্দেহ কাকে করছেন? 

- আপনার মেয়ে পারুলকে। 

পারুলের হাতে লেগে চায়ের কাপটা নিচে পরে গেল, চেয়ারম্যান সাহেব এবং দারোগা সাহেবের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। পারুল কিছু বলতে গিয়ে মুখ আটকে গেল তার। 

- সাজু ভাই বললেন, দ্বিতীয় সন্দেহের তালিকায় আছেন চেয়ারম্যান সাহেব আপনি নিজেই। যদি আপনার মেয়ে পারুল খুনি না হয় তাহলে আপনি হচ্ছেন খুনি। 

- চেয়ারম্যান সাহেব চেয়ার ছেড়ে দাড়িয়ে উঠে বললেন, মানে কি এসবের? 

- সাজু ভাই তখন পকেটে হাত ঢুকিয়ে দাঁড়িয়ে গিয়ে বললেন, জ্বি চেয়ারম্যান সাহেব। আপনি কি অস্বীকার করতে পারবেন? রুহি এবং তার বান্ধবী সবাই যখন ক্লাস নাইনে পড়তো তখন আপনার ছেলে তাদের একজনকে বিরক্ত করেছিল? আর তখন সেই মেয়ে স্কুলের হেডমাস্টারের কাছে বিচার দিল। আপনি ছিলেন স্কুলের সভাপতি এবং এলাকার চেয়ারম্যান তাই বিচার করতে হয়েছে আপনাকে। বিরক্ত করার সাক্ষী হিসেবে রুহিসহ সকল বান্ধবীরা তখন সাক্ষী দিল এবং আপনি বিচার করে আপনার ছেলেকে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দিলেন। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে আপনার ছেলে ঢাকা গিয়ে মামার বাসায় উঠেছিল ঠিকই কিন্তু তিনদিন পরে রোড এক্সিডেন্টে মারা গেল। আর সেই প্রতিশোধ নিতে হয়তো পারুল তার ভাইয়ের জন্য খুনগুলা করেছে নাহলে আপনি সন্তানের জন্য এগুলো করছেন। 

- পারুল এবং চেয়ারম্যান ঠোঁট নাড়াতে লাগলো কিন্তু শব্দ হচ্ছে না। 

.

আমি আপনাদের সকলের মনের অনুভূতি জানতে চাই, সবাই একটু মন্তব্য করবেন আশা করি। 

.

চলবে...
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 2 users Like Bangla Golpo's post
Like Reply
#18
পর্ব-০৭ 




- সাজু ভাই বললো, এতো নিখুঁত পরিকল্পনা করে খুন করছেন যে এলাকাবাসী কেউ বুঝতেই পারছে না। কিন্তু এসব বিষয় খুঁজে খুঁজে বের করার খুব সখ আমাদের, এগুলো নেশা হয়ে গেছে। 

- পারুল চিৎকার করে বললো, চুপ করেন সাজু সাহেব...! গোয়েন্দা হয়েছেন বলে সন্দেহ করতে পারেন ঠিকই কিন্তু সরাসরি এভাবে খুনি বলে তো অপমান করতে পারেন না। হ্যাঁ মানছি আমার সে ভাইয়ের জন্য আমরা কষ্ট পেয়েছি, তাই বলে যে এত জঘন্য কাজ করবো সেটা কোনদিন ভাবিনি। 

- এতো উত্তেজিত হচ্ছেন কেন মিস পারুল? এই সামান্য কথাতেই এমন অবস্থা? আমরা যেহেতু সন্দেহের তালিকা প্রকাশ করেছি সেহেতু অবশ্যই উপযুক্ত প্রমাণ বের করবো। আর সেই প্রমাণের জন্য আমরা অপেক্ষা করে যাচ্ছি নাহলে তো এর আগেই সরাসরি বলে দিতাম। 

- চেয়ারম্যান বললো, আপনাদেরকে আমি কত আগ্রহ নিয়ে আমার বাড়িতে থাকতে দিলাম। যেন খুনি তাড়াতাড়ি ধরা পরে এবং এলাকার মধ্যে শান্তি ফিরে আসে। কিন্তু আপনারা আমাকেই যে সন্দেহ করতে পারেন সেটা ধারণা করতে পারছি না, অবাক হলাম। 

- সরি চেয়ারম্যান সাহেব, আমাদের সন্দেহের যে তালিকা আমরা করি সেখানে চুল পরিমাণ সন্দেহ হওয়া ব্যক্তিও স্থান পায়। আর আপনাদের সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে এবং সেটা আমরা তো ভালো করে উপস্থাপন করেছি। 

- দারোগা বললেন, সাজু ভাই আপনি আর হাসান সাহেব দুজন মিলে আরেকটু আলোচনা করতে থাকুন। চেয়ারম্যান সাহেবকে আমি যতটুকু চিনি তাতে তিনি এসব ব্যাপারে নেই, আপনারা নাহয় আরেকটু গভীর চিন্তা করুন। 

- হাসান সাহেব বললো, সেটা তো আমরা অবশ্যই করবো দারোগা সাহেব, শুধু শুধু খুনের কারণ দেখিয়ে কাউকে খুনি বলে চলে যেতে আসিনি। সবকিছু পরিষ্কার করে উপস্থাপন করে তারপরই আমরা যাবো, তাই উপযুক্ত প্রমাণ বের করা পর্যন্ত কাউকে কিছু বলবো না। 

- সাজু ভাই তখন পারুলের দিকে তাকিয়ে বললো, আপনারা এই কদিনে আমাদের অনেক সেবা করেছেন। আপনাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ থাকব, তবে এখানে আর থাকতে পারবো না। তাই এখনই দারোগা সাহেবের সঙ্গে বেরিয়ে যাচ্ছি, থানার নিকটেই থাকার জন্য একটা ঘর আমরা গতকাল ঠিক করেছি। আপাতত সেখানেই থাকব আমরা দুজন, আর বাকি কাজটা সেখান থেকেই সমাপ্ত করবো ইনশাল্লাহ।

তিনজনেই চেয়ারম্যান সাহেবের বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তায় নেমে গেল। চেয়ারম্যান সাহেব ও তার মেয়ে পারুল হতাশ হয়ে বিস্মিত নেত্রে তাকিয়ে রইল। 

-----

জামিল চোরা আফসোস করতে করতে হাজতের মধ্যে অস্থির হয়ে গেছে, সে তার জীবনে অনেক খারাপ কাজ করেছে কিন্তু একটা মেয়ের জন্য সে কিছু করতে চাইল তা হচ্ছে না। ওই মেয়েটা এখন কেমন আছে? বেঁচে আছে তো? নাকি আত্মহত্যা করেছে? আচ্ছা সাজু ভাই নামের ছেলেটা যদি সবকিছুর জন্য দায়ী হবে তাহলে সে কাগজটা নিয়ে এতক্ষণে কি করেছে? 

দারোগা সাহেবের প্রতি তার ঘৃণার শেষ নেই, সে তার জীবনে পুলিশকে সবসময় গালি দিত ঠিকই কিন্তু মনে মনে ভাবতো "পুলিশ তার দায়িত্ব পালন করে তাই তার মতো জামিল চোরাকে পিটায়।"
কিন্তু এই প্রথম কোন পুলিশকে সে মন থেকে খুব ঘৃণা করে যাচ্ছে। 

বেলা এগারোটার দিকে একটা লোককে তার সাথে জেলের মধ্যে রাখা হয়েছে। জামিল চোরা দেখল যে লোকটা মন খারাপ করে বসে আছে, সে তার কাছে গিয়ে বসলো। 

- ভাইজান আসসালামু আলাইকুম। 

- লোকটা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আস্তে করে বললো, ওয়া আলাইকুম আসসালাম।

- ভাইজান আপনাকে কেন ধরে এনেছে? 

- আরে খামকা নিয়ে এসেছে, স্ট্যান্ডে বসে একটু হাতাহাতি করেছিলাম অমনি নিয়ে এসেছে। তবে সন্ধ্যার মধ্যে বেরিয়ে যাবো। 

- বলেন কি? 

- হ্যাঁ, কিছু টাকা দিয়ে সবকিছু ফিনিস, তা তুমি কেন এসেছো? বাড়ি কোথায়? 

- আমার কোন বাড়িঘর নেই, ছোটবেলা থেকে রাস্তায় রাস্তায় মানুষ হয়েছি। একটু জ্ঞান হবার পর থেকে মানুষের পকেট মেরে আর চুরি করে তবে পেট চলে। 

- ধুর শালা চোরা, দুরে গিয়ে বস। 

- ভাইজান আমি চুরি করে জেলে আসিনি, একটা উপকার করতে গিয়ে জেলে এসেছি। 

- মানে কি? 

- আপনাদের এই উপজেলার মধ্যে কোন গ্রামের মধ্যে বা ইউনিয়নের মধ্যে মেয়েরা খুন হচ্ছে? 

- আমাদের পাশের গ্রাম, কিন্তু কেন? 

- আমার একটা উপকার করবেন? 

- কি উপকার? 

- আপনি যদি সত্যি সত্যি সন্ধ্যার মধ্যে বেরিয়ে যেতে পারেন তাহলে সেই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহেবকে একটা খবর দেবেন ভাইজান? 

- কিসের খবর? তোমার মতো চোর তাকে কিসের খবর দেবে? 

- তাকে বলবেন, আমি ওই খুনের ব্যাপারে কিছু একটা জানি তাই তিনি যেভাবেই হোক আমার সঙ্গে দেখা করুক। 

- কি জানো তুমি? 

- মাফ করবেন, আমি একবার সত্যি বলে জেলের মধ্যে এসেছি তাই দ্বিতীয় কাউকে বলতে চাই না। 

- আমি যদি তাকে সঙ্গে করে নিয়ে আসি তাহলে কি জানতে পারবো? 

- হ্যাঁ জানতে পারবেন। 

- ঠিক আছে বের হয়ে সরাসরি আমি চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে যাবো, এবং নিয়ে আসবো। কিন্তু কোন ধরনের ফাজলামো করার জন্য যদি ডাকো তাহলে তো তোমার অবস্থা খারাপ। 

- ঠিক আছে। 

নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে গেল জামিল চোরা, আসরের দিকে আগন্তুক লোকটা সত্যি সত্যি ছাড়া পেয়ে গেল। যাবার সময় তিনি বলে গেছেন যে অবশ্যই চেয়ারম্যান সাহেবকে বলবে। 

- - - - -

জানালা দিয়ে ঢাকা শহরের অজস্র বিল্ডিং চোখে পরছে রুহির, উত্তরার প্রিয়াঙ্কা সিটিতে এই বাড়ির মধ্যে তাকে নিয়ে এসেছে সাজু ভাই। একটা মেয়ে তার সঙ্গে কথা বলে সবসময়, কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে আবার দরজা বন্ধ করে চলে যায়। রুহির কাছে কোন মোবাইল নেই বলে সে কাউকে কিছু বলতে পারছে না। 

সাজু ভাইয়ের উপর এতটা ঘৃণা হবে কখনো ভেবে দেখেনি রুহি, একটা মানুষ এতটা খারাপ কেন? 

মেয়েটা রুমের মধ্যে এসে বললোঃ-

- কি করো তুমি? 

- রুহি গম্ভীর হয়ে বললো, কিছু না। 

- তোমার পছন্দের একটা খাবারের নাম বলো তো তাহলে সেটা রান্না করা হবে। রাতের খাবার খেতে গিয়ে তাহলে পছন্দের খাবার পাবে। 

- বিষ আছে আপু? বিষ দিতে পারবেন? 

- ছি এমন করে কেউ বলে? 

- আপনারা সবাই খুব খারাপ, সাজু ভাইয়ের হয়ে সবাই কাজ করেন তাই না? 

- হ্যাঁ তাই। 

- কোন লাভ নেই, সত্যি একদিন বের হবেই, আর সেদিন সাজু ভাইয়ের মতো মুখোশধারী মানুষের মুখে জনগণ থুতু ফেলবে। 

- কিন্তু কিছু কিছু সময় মানুষটা খারাপ জেনেও তাকে তেল মারতে হয়, এটাই বাস্তবতা। 

রুহি চুপ করে রইল, মেয়েটা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে আবার দরজা বন্ধ করে চলে গেল। 

,
,

সন্ধ্যা বেলা একটা চায়ের দোকানে একসঙ্গে বসে আছে সাজু ভাই, হাসান সাহেব এবং দারোগা সাহেব। 

- চায়ের কাপে বিস্কুট ভিজিয়ে মুখে দিয়ে দারোগা বললেন, আমার কিন্তু চেয়ারম্যান সাহেব কিংবা তার মেয়েকে সন্দেহ হচ্ছে না। যদিও যথেষ্ট কারণ আছে তবুও এর পিছনে অন্য কোন বিষয় জড়িত আছে বলে মনে হচ্ছে। 

- সাজু ভাই বললেন, সেটা আমরা যেদিন এসেছি তার পরেরদিনই ভেবেছি। যদিও চেয়ারম্যান এবং তার মেয়ে আমাদের প্রথম তালিকায়। তাই তাদের নিয়ে সামনে যেতে চাই, চলতি পথে অবশ্যই কোন একটা সন্দেহে রাস্তা ঘুরে যেতে পারে। তখন হয়ত পথ পরিবর্তন করতে হবে। 

- হাসান বললো, আমার চেয়ে ইদানিং সাজুর মধ্যে বেশি বুদ্ধি দেখতে পাচ্ছি। 

- দারোগা বললেন, কিন্তু তাদের দুজনকে বাদ দিয়ে আর কাকে কাকে সন্দেহ করা হচ্ছে? 

- ব্যক্তি ঠিক করিনি তবে কারণ ঠিক করেছি, এ বিষয় আরও ভাবতে হবে। 

- চোরকে নিয়ে আছি বড় সমস্যার মধ্যে, থানার মধ্যে গেলেই আমার দিকে একরাশ ঘৃণা নিয়ে তাকিয়ে থাকে। 

- একটু হজম করুন স্যার, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে খুব শীঘ্রই। 

- আপনারা কিন্তু তিনবেলা হোটেলে না খেয়ে আমার বাসায় খেতে পারতেন। আমার বাসা কিন্তু খুব বেশি দুরে নয়। 

- তা ঠিক হবে না স্যার, আমরা তাহলে কেমন এক ইতস্তত বোধ করবো। আমরা চেয়ারম্যান সাহেবের বাড়িতেও থাকতাম না, কিন্তু তাদের মধ্যে গিয়ে শুধু তাদের দিকে নজর রাখতে চেয়েছিলাম। 

- কি মনে হয়? 

- অনেক কিছু মনে হয়, তবে বাবা মেয়ের মধ্যে আমি মেয়েকে মানে পারুলকে বেশি সন্দেহ করি। 

- কেন? 

- কারণ রুহির যে বান্ধবী ঢাকা মিরপুরে খুন হয়ে গেছে, সে মেয়ে খুন হবার সেই রাতে পারুল ঢাকা গেছিল। রাত আটটার দিকে গাড়িতে উঠেছে এবং পরদিন ভোরবেলা ছয়টা বাজে ঢাকা থেকে চলে এসেছে। 

- দারোগা উত্তেজিত হয়ে বললো, তারমানে সেই যে পারুলের ব্যাগের ভেতর থেকে টিকিট বের হয়েছিল সেটা ওই রাতে আর ভোরের ছিল? 

- হ্যাঁ স্যার, হয়তো পারুল খুব গভীর পরিকল্পনা করে যাচ্ছে তবুও একটু ফাঁকা রেখেই গেল। 

- তাহলে তো পারুলকে টার্গেট করতে হবে? 

- দেখি কি করা যায়। 

- আচ্ছা।  

- - - - -

রাত দশটা। 
রুমের মধ্যে একই বিছানায় শুয়ে আছে সাজু ভাই ও হাসান সাহেব। হোটেলের মধ্যে থেকে একটা বিষয় নিয়ে চিন্তিত সাজু ভাই, তার মনের মধ্যে এ প্রশ্নের জবাব মিলছে না। গভীর ভাবনার জগতে সাজু ভাই, আর তার পাশে শুয়ে হাসান সাহেব মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত। 

দশটা বারো মিনিটে সাজু ভাইয়ের মোবাইল বেজে উঠল, মোবাইল হাতে নিয়ে অপরিচিত নাম্বার দেখে অবাক হয়নি সাজু ভাই। কারণ তাকে তো কত মানুষ অপরিচিত হয়েও কল দিয়ে কথা বলতে চায়। 

- রিসিভ করে সাজু ভাই বললেন, আসসালামু আলাইকুম। 

- অপর প্রান্ত থেকে ভেসে এলো, রাখ তোর এই ভদ্রলোকী, যা জিজ্ঞেস করি তার জবাব দে। 

- কে আপনি? আর এভাবে অদ্ভুত ব্যবহার করে কেন কথা বলছেন? 

- কালকে সকালের মধ্যে টাঙ্গাইল ছেড়ে চলে যাবি, আর এই মুহূর্তে বলবি রুহি কোথায়? 

- ওহ্হ আচ্ছা, তুই? তোর জন্য অপেক্ষা করছি আমি, কি খবর তোর? 

- একদম চালাকি করবি না। 

- কোন চালাকি নয়, আমি গতকাল রাতে রুহিকে কিডনাপ করার পর থেকে তোর কলের অপেক্ষা করেছি। কিন্তু তুই তো ২২ ঘন্টা দেরি ফেলেছিস দাদা ভাই। 

- বল রুহি কোথায়? 

- যদি না বলি? 

- দেখ সাজু, আমি চাইলে কিন্তু তোদের দুজনকে একসাথে মেরে লাশ বানাতে পারি কিন্তু আমার সেটা ইচ্ছে নাই। মেয়েগুলো আমার টার্গেট তাই তাদেরকে শিকার করবো, বল রুহি কোথায়? 

- রুহির কথা বলবো না, মরে গেলেও না কারণ আমি জানি যে রুহি যতদিন আমাদের কাছে বন্দী থাকবে ততদিন তুই আর কাউকে খুন করবি না। 

- কেন করবো না? 

- কারণ তো তোর জানার কথা। শুনে রাখ ভাই, সাজু ভাই যখন এসেছে তখন তোর লুকিয়ে থাকার দিন ফুরিয়ে গেছে। আশা করি খুব শীঘ্রই তোর সঙ্গে আমার মুখোমুখি দেখা হবে। 

- তাহলে কি তুই রুহির কথা বলবি না? 

- বললাম তো না না না। 

- আজকে রাতের মধ্যেই আরেকটা লাশ পাবি, মনে রাখিস তোরা। তুই তোর দারোগাকে সঙ্গে নিয়ে পারলে খুন আটকিয়ে দেখা। 

.
.
.

চলবে...?

.
.
সকলের গঠনমূলক মন্তব্য আশায় অপেক্ষায় রইলাম, আশা করি সুন্দর করে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করবেন সবাই। 
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#19
পর্ব:-০৮



- সাজু ভাই বললেন, যদি আর কোন মেয়ে লাশ হয় তাহলে রুহিকেও আমি লাশ বানিয়ে দেবো। ভেবেছিলাম বেশি বড় গেইম খেলতে হবে না কিন্তু সেটা ভুল ছিল, আমিও পুরোপুরি তৈরী হয়ে তোর মোকাবিলা করতে চাই। 



- ঠিক আছে দেখা যাবে কি করতে পারিস। 



লোকটা কল কেটে দিল, সাজু ভাই তখন হাতের মোবাইল রেখে চুপ করে চোখ বন্ধ করলো। হাসান এতক্ষণ ধরে শুনছিল, সেও সাজুর মতো গভীর ভাবনার জগতে হারিয়ে গেল। 



একটু পরে সাজু মোবাইল বের করে মেসেঞ্জারে গিয়ে লম্বা এক মেসেজ লিখলো তারপর পাঠিয়ে দিল গন্তব্যে। হাসান তখন বললোঃ-



- মামলা অনেক পেঁচিয়ে যাচ্ছে সাজু, এখন কিন্তু আমাদের বিপদে পরার সম্ভবনা বেশি। 



- সেটা আমিও ভেবেছি হাসান ভাই, কিন্তু আমার তো কিছু করার নেই। মোটামুটি নিশ্চিত হয়েও তেমন কিছু করতে পারি না কারণ প্রমাণ ছাড়া সবকিছুই বিফল। এ পর্যন্ত সন্দেহের তালিকায় তো কতই স্থান হলো কিন্তু পাকাপোক্ত ভাবে তো কাউকে পাচ্ছি না। আবার যাকে টার্গেট করলাম তার বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ নেই, তাছাড়া কেউই বিশ্বাস করবে না। 



- সত্যি সত্যি যদি আজকে রাতের মধ্যে আরেকটা মেয়ে খুন হয়ে যায় তাহলে কি করবা সাজু? 



- আপনি নিশ্চিত থাকুন, আজকে রাতে কেউ খুন হবে না কারণ রুহি আমাদের হাতে। 



- সেটা তো আমাদের সন্দেহ, কিন্তু সন্দেহ যদি সত্যি নাহয় তাহলে তো আসল খুনি ঠিকই খুন করে দেবে। 



- কিন্তু হাসান ভাই... 



- দেখ সাজু, আমার মনে হচ্ছে খুনি আমাদের নিয়ে একটা পরিকল্পনা করেছে। সুক্ষ্ম একটা সন্দেহ তৈরি করেছে যেন আমরা সেই অনুযায়ী চলতি থাকি। 



- কিন্তু কি করবো হাসান ভাই? যেকোনো একটা পথ ধরে তো সামনে যেতে হবে, যদি থেমে থাকি তাহলে তো চলবে না। 



- ভুল পথে না হেঁটে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে কিন্তু অপেক্ষা করা ভালো, নাহলে ভুল পথে যতটুকু হাঁটবো ততটুকু পিছনে আসতে হবে। মনে করো, আমরা খুনির পিছনে পিছনে যাচ্ছি, হঠাৎ করে রাস্তা দুই দিকে চলে গেছে। এখন আমরা যদি তারা যে রাস্তায় গেছে সেদিকে না গিয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে যাই তাহলে তো বিপদ। যদিও দেরিতে বুঝতে পারবো কিন্তু ততক্ষণে তারা কিন্তু চলে যাবে নাগালের বাইরে। 



- কালকে সকালে প্রথম শিকার হওয়া মেয়ে শারমিনের স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে হবে। আমার মনে হয় সেখানে কিছু পথ বের হতে পারে, কারণ তার সঙ্গে এখনো যোগাযোগ করিনি। তাকে সেই প্রথম দিনে এরেস্ট করার পরে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। 



- ঠিক আছে তাই হবে। 



বাতি বন্ধ করে হাসান সাহেব ঘুমানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন কিন্তু সাজু ভাই মাথায় হাত দিয়ে অন্ধকার পর্যবেক্ষণ করছেন। ঘড়িতে যখন রাত তিনটা বাজে, তখনও সাজু ভাই সজাগ ছিল, তারপর সে কখন ঘুমিয়ে গেছে নিজেই জানে না।



- - - - -



এদিকে, জামিল চোরার কথা শুনে চেয়ারম্যান ও তার মেয়ে পারুল দুজনেই থানায় এসে হাজির হলো সন্ধ্যা বেলা। জামিল চোরা সবকিছু আস্তে আস্তে খুলে বললো, সবকিছু শুনে চেয়ারম্যান ও তার মেয়ে পারুল চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল একে অপরের দিকে। 



- পারুল আস্তে করে বললো, সাজু ভাই লোকটা একটা গভীর জলের মাছ। নিজে এতকিছু ঘটিয়ে আমাদের জড়িয়ে দিচ্ছে, কতটা খারাপ মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে আমাদের। খুনি ধরার জন্য আমি খুনিকেই নিজের হাতে রান্না করে দিছি, ইস কি লজ্জা কি লজ্জা। 



- চেয়ারম্যান বললো, তুমি সেই কাগজে লেখা সবকিছু বলতে পারবে? 



- জামিল চোরা বললো, স্যার আমার কাছে ওই কাগজের আরেকটা কপি আছে। আসলে আমি একবার হারিয়ে ফেলছিলাম, বাস থেকে নেমে চা খেতে গিয়ে রেখে চলে আসছিলাম। তারপর যখন আবারও ফিরে পেলাম তখন সঙ্গে সঙ্গে একটা ফটোকপি করে রেখেছি। আসল কপি দারোগা সাহেবের কাছে দিলাম কিন্তু ফটোকপি আছে আমার সঙ্গে। 



দারোগা সাহেব সাজুদের সঙ্গে আলোচনা করে যখন থানায় আসলেন তখনই তাকে ধরে আটক করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কাছে চেয়ারম্যান সবকিছু কল দিয়ে জানিয়েছে তাই তিনি থানায় কল দিয়ে তাকে আটকাতে বলেছেন। দারোগার হাতের মোবাইল কেড়ে নিল এবং সাজু ভাইয়ের খোঁজ বের করতে বললো। দারোগা তখন বুদ্ধি করে বলেছিল যে " সাজু ভাই ঢাকা গেছে সন্ধ্যা বেলা, কালকে সকালে ফিরবে। "



অপর দারোগার সঙ্গে চেয়ারম্যান সাহেব আলাপ করে বললো;- 



- এখন যদি সাজু ভাই টের পায় তাহলে সকাল বেলা গ্রামের মধ্যে নাও আসতে পারে। তারচেয়ে বরং দারোগাকে আটকে রাখুন এবং সকাল বেলা দারোগাকে দিয়ে কল করিয়ে থানায় আসতে বলবেন। 



সিদ্ধান্ত সেটাই বহাল রইল, সবাইকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে যেন এই খবর কাউকে জানানো না হয়। মোতালেব দারোগা মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ করছেন, সকাল বেলা তাকে সত্যি সত্যি বাধ্য হয়ে কল দিতে হবে। আর সে কল দিলে সাজু ভাই এবং হাসান সাহেব সঙ্গে সঙ্গে থানায় উপস্থিত হবে তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু তারা আসলেই তো বিপদ ঘিরে ধরবে, তাহলে কি এভাবেই আসল খুনি পার হয়ে যাবে? 



,

,



গভীর রাতে ঘুমানোর জন্য সাজু ভাইয়ের ঘুম ভাঙ্গতে দেরি হলো, হাসান সাহেব সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে বাহিরে গিয়ে নাস্তা করে আসলেন। নাস্তা অর্ধেক শেষ করে হোটেলের মধ্যে একটা আলোচনা শুনে দৌড়ে রুমে এলো। রুমের মধ্যে এসেই সাজু ভাইকে ডেকে জাগ্রত করলেন আর বললেনঃ-



- সাজু ভাই রুহির আরেকটা বান্ধবী খুন হয়েছে, বলেছিলাম না খুন হবে? ইসস যদি তখন রাতেই দারোগা সাহেবের সঙ্গে বলতাম তাহলে হয়তো নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারতো। 



- সাজু ভাই আশ্চর্য হয়ে সদ্য ঘুম থেকে উঠে চোখ ফোলা ফোলা করে তাকিয়ে রইল। তার যেন এই কথা বিশ্বাস হচ্ছে না, সত্যি সত্যি কি আরেকটা খুন হয়েছে? 



- হ্যাঁ সাজু, নাস্তা করতে গিয়ে শুনলাম সবাই বলাবলি করছে।



- কি? 



- আজকে সকালে ফজরের আজান দেবার পরে মেয়েটার বাবা বাইরে বের হয়েছে আর তখনই খুনি ঘরে ঢুকে খুন করে চলে গেছে। কারণ মেয়ের দাদি দেখেছিল একটা লোক কালো পোশাক পরে উঠোন দিয়ে চলে যাচ্ছে। 



- আশ্চর্য লাগলো হাসান ভাই। 



- এখানে আশ্চর্যের কি আছে? আমাদের সন্দেহ সঠিক নয় সাজু, আবারও ভাবতে হবে। চলো এই মুহূর্তে দারোগা সাহেবের কাছে গিয়ে কথা বলতে হবে তারপর শারমিনের স্বামীর কাছে যাবো। 



সাজু ভাইয়ের মোবাইল বেজে উঠল, নাম্বার দেখে অবাক হয়ে গেল সাজু। গতকাল রাতে যে নাম্বার দিয়ে কল করা হয়েছে সেই নাম্বার দিয়ে কল এসে গেছে। সাজু রিসিভ করলোঃ-



- হাহাহা হাহাহা সাজু ভাই নাকি সাজু আপা? 



- মানে? 



- যেভাবে নামের পদবি সাজুর সঙ্গে ভাই যুক্ত করছো তাতে মনে হয় বিরাট কিছু, কিন্তু কাজের বেলা তো মেয়ে মেয়ে ভাব তাই বললাম সাজু আপু। 



- আজকে রাতে আরেকটা খুন করে দিলি? 



- কি করবো সাজু? আমি তো তোকে বলেছিলাম যে আরেকটা মেয়ে খুন হবে, তাই নিজের দেওয়া কথা রক্ষা করেছি। হিহিহি অবাক হচ্ছ? 



- হ্যাঁ কিছুটা। 



- ঠিক আছে সাজু ভাই, ভালো থেকো। 



- তোমার দিন ফুরিয়ে গেছে। 



- না সাজু ভাই আমার দিন শুরু হচ্ছে কিন্তু তুমি তোমার দিন ফুরিয়ে গেছে সেটা হিসাব করো। গতকাল রাতে রুহির বান্ধবী খুন হয়েছে এটার চেয়ে আরেকটা বড় খবর আছে। 



- মানে কি? 



- রুহি এখন আমাদের কাছে হাহাহা। 



- কি...? মানে কি? 



- রুহির লেখা সেই কাগজের মাধ্যমে তোমাকে মনে হয় আজকেই জেলে যেতে হবে সাজু ভাই। তোমার জন্য বড় আফসোস হচ্ছে। 



- তুই রুহিকে কীভাবে খুঁজে পেলি? 



- এটাই যে আসল খেলা সাজু ভাই। বায় বায়। 



,

,



কল কেটে গেল, সাজু ভাই তাড়াতাড়ি মোবাইলে তানিয়ার নাম্বার বের করলো। তানিয়ার কাছেই তো রুহি ছিল তাহলে তাকে সত্যি সত্যি আবারও নিয়ে গেছে খুনি? আর সেজন্যই মনে হয় বান্ধবী খুন হয়েছে, কারণ রুহিকে পেয়ে গেছে তাই।



৮/১০ বার কল দেবার পরে তানিয়া রিসিভ করে এমন করুণ স্বরে হ্যালো বললো যে সেটা শুনেই সাজু বুঝতে পেরেছে কিছু একটা হয়ে গেছে। 



- সাজু ভাই বললো, তুমি ঠিক আছো তানিয়া? 



- আমাকে ক্ষমা করবেন সাজু ভাই। 



- কি হয়েছে গতকাল রাতে? আর তুমি আমাকে রাতে কেন জানাওনি? 



- আমি কঠিন অসুস্থ, আমার মাথায় আঘাত করেছে রুহি। 



- ওকে আনতে কে গেছিল? 



- কেউ আসেনি, বাড়িতে তো অপরিচিত কাউকে প্রবেশ করতে দেবে না। রুহি নিজেই বের হয়ে গেছে বাসা থেকে। 



- কিন্তু কীভাবে? 



- রাত দেড়টার দিকে হঠাৎ করে কিছু ভাঙ্গার শব্দ শুনে আমি রুহির রুমের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াই। কিন্তু দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে সে শব্দ করছিল, আমি বারবার ডাকার পরে হঠাৎ করে দরজা খুলে দিল। কিন্তু আমি যখনই প্রবেশ করলাম ঠিক তখনই আমার মাথায় আঘাত করে রুহি। 



- কি দিয়ে আঘাত করেছে? 



- খাটের তোষকের নিচে যে কাঠের চালনা সেই চালনা ভেঙ্গে কাঠ বানিয়েছে। আর সেটা দিয়ে আঘাত করেছে আমাকে, আমি তখন অজ্ঞান হয়ে গেলাম৷ রুহি তখন দরজা খুলে সরাসরি নিচে গিয়ে দারোয়ানকে গেইট খুলতে বলে। কিন্তু সেই সময় দারোয়ান তাকে বের হতে দেবে না, তখন রুহি বললো আমি নাকি খুব অসুস্থ এবং ফ্লোরে পরে মাথা কেটে গেছে। বাসায় স্যাভলন নেই বলে সে বাইরে যাচ্ছে, দারোয়ান তখন গেইট খুলে দিয়েছে। কিন্তু রাতে আর রুহি ফিরে আসেনি বলে দারোয়ান সন্দেহ করেছে এবং আমার ফ্ল্যাটে এসে দরজা খোলা দেখে অবাক হয়ে গেল। 



- বুঝতে পারছি, কিন্তু তুমিতো আমাকে জানাতে পারতে তানিয়া। 



- আসলে জ্ঞান ফেরার পর থেকে আশেপাশে অনেক মানুষ ছিল তাই কল করিনি। এখন আমি বাথরুমে বসে কথা বলছি কারণ ফ্ল্যাটে অনেক মানুষ আছে। 



- ঠিক আছে তুমি থাকো আমি দেখছি। 



কল কেটে দিয়ে পাগলের মতো হয়ে গেল সাজু ভাই, সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে গেল। তার পরিকল্পনা সবকিছুই খুনি ভেস্তে দিয়েছে, তাকে হার মানিয়ে দিচ্ছে খুনি। সাজু ভাই তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে তৈরি হচ্ছে এবং হাসান সাহেব কে বললোঃ-হাসান ভাই তৈরি হন আমরা থানায় গিয়ে খুব তাড়াতাড়ি দারোগা সাহেবের সঙ্গে দেখা করি। 



বের হবার মুহূর্তে দারোগা সাহেবের নাম্বার দিয়ে কল এসেছে। সাজু রিসিভ করে বললোঃ- স্যার আপনার কাছেই আসতেছি আপনি বরং অপেক্ষা করুন। 



দারোগা সাহেবকে কিছু বলতে সুযোগ না দিয়ে ওরা রিক্সা নিয়ে থানায় চলে গেল। কিন্তু ভিতরে প্রবেশ করেই সাজু ভাই ও হাসান সাহেব অবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইলেন। 



- চেয়ারম্যান সাহেব বললো, এসো সাজু ভাই তাড়াতাড়ি এসো। তোমাদের জন্য অপেক্ষা করে আছি আর তোমরা মাত্র আসলে? 



- একটা পুলিশ বললো, কালকে রাতে আপনারা কোথায় ছিলেন? 



- বাসায়, কেন? 



- ওমা তাই নাকি? তাহলে মোতালেব দারোগা যে বললো তোমরা নাকি ঢাকা গেছো? তারমানে মিথ্যা বলেছে? 



- পারুল বললো, মিথ্যা বলবে না কেন? দারোগা সাহেব তো জানতেন যে আজকে রাতে আরেকটা খুন হবে। তাই তিনি আগে থেকে সবাইকে বলে দিয়েছে যে এরা ঢাকা গেছে। যাতে করে সবাই প্রশ্ন করলেও এরা বলবে " আমরা তো ঢাকা ছিলাম, দারোগা সাহেব সাক্ষী আছে। "



- সাজু ভাই বললেন, মানে কি? 



- ভোরবেলা রুহির বান্ধবী ঝুমুরকে খুন করেছেন আপনি, চোখ দেখে বোঝা যাচ্ছে। 



- সাজু ভাই বললেন, রাতে টেনশনে ঘুমাতে পারি নাই তাই চোখ ফুলে গেছে। 



- চেয়ারম্যান বললো, কুত্তা...বা... খুন করে রাত জেগেছে আবার বলে ঘুমাতে পারি নাই। 



.

.

.

.



চলবে...
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
#20
 পর্ব:-০৯





খুনি ধরা পরেছে শুনে বিভিন্ন পত্রিকা থেকে ছবি তোলার জন্য সাংবাদিক এসেছে। তাদেরকে একা সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে কনস্টেবল, কিন্তু তার কাছে বেশ লাগছে। সাজু ভাইকে যখন জেলে যেতে হয়েছে ঠিক তার আগেই সে সকলের সামনে মোবাইল বের করে দ্রুত একটা মেসেজ সেন্ট করে দিল। গতকাল রাতে সাজু মেসেঞ্জারে মেসেজ পাঠানোর সময় এটাও লিখে রেখেছিল।

কালকে রাতে সাজু ভাই তার বন্ধু সজীবকে ওই মেসেজ লিখেছিল, আর এখন যেটা দিয়েছে সেটাও সজীবকে দিয়েছে। 

গতকাল রাতের মেসেজ ছিল:- 

সজীব, এখানের পরিস্থিতি বেশি খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এখর মনে হয় আমাকেও জেলে যেতে হবে তাই অসমাপ্ত কাজ করতে তোকে টাঙ্গাইলে আসতে হবে। সরাসরি টাঙ্গাইলের বাসে না এসে তুই ঢাকা নেমে যাবি, তারপর মনির ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করে আমার কিছু তথ্য নিয়ে আসবি। একটা নাম্বার দিয়ে কল এসেছিল আমার কাছে, আমি সেই নাম্বার মনির ভাইয়ের কাছে দিয়ে দিচ্ছি। মনির ভাই সেই নাম্বার দিয়ে তার সবকিছু ডিটেইলস বের করবে, সাবধান কারণ সবকিছু গোপন রাখতে হবে। 

আমাদের দুজনের কলের কথাবার্তার রেকর্ডস আমার কাছে রয়েছে। আমি তোর হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার সেই রেকর্ড পাঠিয়ে দিচ্ছি, আমাকে কল করা সেই নাম্বারের যাবতীয় ডিটেইলস বের করে তুই মোটামুটি ৫০% এগিয়ে যেতে পারবি। তারপর তুই মিরপুরে আজমল আঙ্কেলের সঙ্গে দেখা করে নিবি কারণ তিনিও তোকে কিছু জানাবে। হয়তো সময় লাগবে কিন্তু তবুও সেই তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত তুই টাঙ্গাইলে আসলেও কোন লাভ হবে না। 

কি কি বের করতে হবে সবকিছু তাদের বলা হয়ে গেছে, তুই শুধু রেজাল্ট নিয়ে আসবি। তারপর সেই রেজাল্ট নিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করবি, তবে আমার মনে হচ্ছে খুব শীঘ্রই আমার সঙ্গে তোর যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। যদি সত্যি সত্যি সেটা হয় তাহলে সকাল বেলা আমি আরেকটা মেসেজ দিয়ে জানিয়ে দেবো। 

----

সকাল বেলা দ্বিতীয় মেসেজ:-

আমার ধারণা সত্যি হয়েছে, তোকে ঠিক যতটুকু বলা হয়েছে ঠিক তাই তাই করবি। মুনির ভাই এবং আজমল আঙ্কেলের কাছ থেকে রেজাল্ট না নিয়ে টাঙ্গাইলে আসবি না। আমাকে এখন জেলে যেতে হচ্ছে তাই যোগাযোগ বন্ধ থাকবে, হয়তো আমি রিমান্ডের সম্মুখীন হবো কিন্তু তোর আনা রেজাল্ট ছাড়া কিন্তু মুখ খুলতে পারবো না। খুনি মোটামুটি আমার চোখের সামনে ভাসছে, কিন্তু সেটা প্রকাশ করা যাচ্ছে না। টাঙ্গাইলে এসেই আগে তুই রুহির বিষয় একটু খোঁজ নিয়ে নিবি কারণ রুহি কোথায় সেটাও জানা দরকার। 

খবরদার তুই সজীব পরিচয় নিয়ে বা আমার বন্ধু সেই হিসাবে টাঙ্গাইলে প্রবেশ করবি না। তোকে কিন্তু একজন সাংবাদিক বা অন্যকিছু রূপ ধরে আসতে হবে নাহলে ঝামেলা হবে। সেই হিসেবে তুই কারওয়ান বাজারে গিয়ে জাহাঙ্গীর টাওয়ারে যেতে পারো, একসঙ্গে দুটো কাজ করতে পারবি। একুশে টিভির সাংবাদিক আতিক আহমেদ এর সঙ্গে দেখা করতে পারিস, আর এয়ার আরাবিয়্যা অফিসে গিয়ে বাকি কাজটা শেষ করবি। 

- - - - -

অফিসে বসে মেসেজ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে সজীব তার স্যারের কাছে ছুটির আবেদন দিল। তারপর ছুটি নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে সরাসরি বাসায় গিয়ে সামান্য কাপড়চোপড় নিয়ে বেরিয়ে গেল। চট্টগ্রাম থেকে দিনরাত ২৪ ঘন্টা ঢাকার বাস পাওয়া যায় তাই এখনই রওনা দিয়েছে। এঁকে খান মোড় থেকে "ইউনিক" পরিবহনের টিকিট সংগ্রহ করে বাসের অপেক্ষা করতে লাগলো। চট্টগ্রাম থেকে বাস যখন ছাড়লো তখন সময় সাড়ে বারোটা পেরিয়ে গেল। 

পাঁচ ঘন্টার মধ্যে ঢাকায় পৌঁছে সজীব সরাসরি প্রথমে গেল কারওয়ান বাজার। এয়ার আরাবিয়্যা অফিস বন্ধ হয়ে গেছে কিন্তু সাংবাদিক আতিককে পাওয়া গেল এবং তিনি রাজি হলেন। ঠিক হলো যে ওই খুনের বিভিন্ন রিপোর্টের জন্য আতিক ভাই সেখানে যাবে এবং তার সহকর্মী হিসেবে সজীব থাকবে সঙ্গী। 

মুনির ভাইয়ের কাছ থেকে সজীবকে যেই নাম্বার দিয়ে কল করা হয়েছে সেই নাম্বারের যাবতীয় ডিটেইলস বের করা হয়েছে। 

মিরপুরে গিয়ে ঝামেলা হয়ে গেল, কারণ আজমল আঙ্কেল বললেন আজকে রাতে নাকি সম্পুর্ণ খবর তিনি জানাতে পারবেন। তাই আজকে সজীবকে ঢাকায় থাকতে হবে, সকাল বেলা সজীব সেই সব তথ্যাদি নিয়ে টাঙ্গাইল যেতে পারবে। 

একটা বিষয় সজীব বুঝতে পারছে না, গতকাল রাতে যে নাম্বার দিয়ে তাকে খুনী কল করেছে সেই নাম্বার নাকি পটুয়াখালীর কুয়াকাটা এলাকার। যে ভোটার আইডি কার্ড দিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করা সেই ঠিক পটুয়াখালীর এবং নাম্বার আজকে সকাল পর্যন্ত সেখানে লোকেশন দেখাচ্ছে। তাহলে সেটা যদি খুনি হয় তবে সে টাঙ্গাইল থেকে পটুয়াখালী গিয়ে কি করে? রহস্য কি? 

বিকেলে সাজু ভাই ও হাসান সাহেবকে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। সেখানেই সাজু ভাইয়ের সঙ্গে সরাসরি এমপি জেলা প্রশাসক নিজে দেখা করতে এসেছেন। এতবড় একটা বিষয় নিয়ে সমগ্র জেলায় হৈচৈ বাধাতে এখন সবাই কেসটা নিয়ে চিন্তিত। 

সাজু ভাইকে আলাদা কক্ষে নিয়ে জেলা প্রশাসক এর সামনে বসানো হয়েছে। তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে অত্র থানার একজন দারোগা ও একজন এস আই। 

- জেলা প্রশাসক বললেন, আপনার সাহস এবং বুদ্ধি দেখে অবাক হলাম সাজু সাহেব। আমি শুধু জানতে চাই আপনার উদ্দেশ্য কি ছিল? কেন এই একের পর একটা মেয়ে খুন করলেন। 

- সাজু ভাই শান্ত গলায় বলল, আমি কিছু করিনি। 

- চুপ করুন, সবকিছু পরিষ্কার হবার পরও আপনি অস্বীকার করছেন? আমরা আদালত থেকে দশ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছি, আশা করি সেটা পাশ হয়ে যাবে। তখন কিন্তু কীভাবে সত্যি কথা বের করতে হবে সেই ট্রেনিং আমাদের আছে। 

- তার দরকার পরবে না। 

- ভেরি গুড, তুমি যদি তার আগেই সবকিছু নিজে স্বীকার করে নাও এবং উপযুক্ত কারণগুলো বলো তাহলে রিমান্ডের দরকার নেই। তখন সরাসরি আদালতে হাজির করা হবে এবং জজ সাহেব বিচারের রায় দেবে। 

- আমি স্বীকার করার কথা বলিনি, আপনার সেই রিমান্ড আবেদন পাশ করার আগেই আসল রহস্য বের হবে আশা করি। শুধু একটু সময়ের অপেক্ষা ছিল সেটা শেষ হচ্ছে, এতটুকুই। 

- মানে কি? 

- সেটা আমি সময় হলেই আপনাকে বলবো স্যার, আপনি এখন কিছু জিজ্ঞেস করবেন না। কারণ আমি একটু অন্যভাবে গুটি সাজাচ্ছি তাই সেখানে ঘাবলা করতে চাই না। 

- এমন সাজানো গোছানো কথা বলে কোন লাভ নেই সাজু সাহেব, কি হবে আর কি হবে না সেটা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই আমার। 

- তাহলেই ভালো, একটা অনুরোধ রাখবেন? 

- কি অনুরোধ? 

- সময় হলে আমাকে কিছুক্ষণের জন্য আপনার ওই এলাকায় নিয়ে যেতে হবে। আপনি সম্পুর্ন কড়া নিরাপত্তা দিয়ে নিয়ে যাবেন সমস্যা নেই। সবকিছু ঠিকঠাক হলেই আমি আপনাকে জানাবো তখন আপনি ব্যবস্থা করবেন। আসল খুনি তখন আমি বের করে দেবো এবং সেটা এলাকাবাসীর সামনেই। 

- এটা তোমার কত নাম্বার প্ল্যান? 

- সময় সবকিছুর বড় সমাধান স্যার। 

- তুমি কি জানো? তোমার বিষয়ে সবচেয়ে বড় সাক্ষী দেবে কে? 

- না জানি না। 

- রুহি। 

- রুহি? মানে কি? সে তো কিডন্যাপ হয়েছে। 

- হাহাহা, কিডন্যাপ হয়েছে নাকি করেছো? তুমিই তো তাকে কিডন্যাপ করেছো, কিন্তু সে এখন তার মা-বাবার কাছে আছে। আমার তার জবানবন্দি নিয়ে এসেছি এবং কোর্টে সেই সাক্ষী দেবে। 

- স্যার রুহি কখন ফিরে এসেছে? তাকে কি কেউ উদ্ধার করেছে নাকি সে একা একা এসেছে? 

- সে একা একাই এসেছে, তুমি তাকে যেখানে আটকে রেখেছিলে সেখান থেকে কৌশলে রুহি পালিয়ে আসতে পেরেছে। ভোরবেলা সে তার বাবার কাছে কল দিয়েছে এবং তার বাবা বিষয়টা পুলিশকে জানায়। পুলিশ তখন উত্তরা থেকে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছে, কিন্তু একটু যেন সমস্যা হয়ে গেল। রুহি সেই বাসার ঠিকানা মনে করতে পারলো না, নাহলে যেখানে তাকে আটকে রাখা হয়েছে সেখানে অভিযান করা হতো।

- আপনাকে অনেক ধন্যবাদ স্যার। 

- মানে? 

- রুহির ফিরে আসার ঘটনা জানানোর জন্য যে কতটা উপকার হয়েছে সেটা বোঝাতে পারবো না। মেলা মেলা ধন্যবাদ স্যার, মেলা মেলা ধন্যবাদ। 

- আজব তো। 

- স্যার আর কিছু জিজ্ঞেস করবেন? 

- নাহ, রিমান্ডের জন্য তৈরি থেকো। 

- ঠিক আছে স্যার আসসালামু আলাইকুম। 

- - - - -

হাসান সাহেব নিজেও অবাক হয়ে গেল, কারণ রুহি যেহেতু একা একা ফিরেছে। এখন শুধু সজীব এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে, এই মুহূর্তে তারা বাহিরে থাকলে ভালো হতো। মিরপুর থেকে সেই আজমল আঙ্কেলের রিপোর্ট পেলেই মোটামুটি সব পরিষ্কার হবে। অনেকদিন পর সাজু ভাইয়ের মুখে হাসি দেখা যাচ্ছে, জেলের মধ্যে থেকেও সাজু ভাই হাসছেন। 

.

.

রাতে আজমল আঙ্কেলের কাছ থেকে রিপোর্ট নিয়ে সজীব সকাল বেলা সাংবাদিক আতিককে নিয়ে টাঙ্গাইল রওনা দিল। ঘটনা ঘটিত উপজেলা গিয়ে জানতে পারলো সাজুকে জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। তাই সেখান থেকে আবারও জেলা কারাগারে রওনা দিল, আতিক সাহেব কষ্ট করে সাজুর সঙ্গে কথা বলার ব্যবস্থা করলেন। 

সজীবকে দেখেই সাজু ভাইয়ের মুখে হাসি দেখা যাচ্ছে আবারও, সে কিছু না বলে সজীব এর কাছ থেকে কিছু শোনার অপেক্ষা করতে লাগলো। 

- সজীব বললো, সাজু তোর সন্দেহ ঠিক আছে, চেয়ারম্যান সাহেবের ছেলে মামার বাসায় গিয়ে এক্সিডেন্টে মারা যায় নাই। সে এখন সৌদি আরব আছে, তার বাবা মানে চেয়ারম্যান সাহেব নিজে তাকে সৌদি আরব পাঠিয়েছে। কিন্তু গ্রামের সকল মানুষের সঙ্গে মিথ্যা বলেছেন। 

- ভেরি গুড, তারপর? 

- তোকে যেই নাম্বার দিয়ে কল করা হয়েছে সেই নাম্বার পটুয়াখালীর লোকেশনে আছে। 

- এটাও ধারণা ছিল, আচ্ছা ওই নাম্বারে চেয়ারম্যান সাহেবের ছেলে সৌদি আরব থেকে কল দিয়ে কথা বলে? 

- হ্যাঁ বলে। আর যেই ছেলে কল দিয়ে তোর সঙ্গে কথা বলেছে সেই ছেলেও সৌদি আরব থাকে।

- এখন সে দেশে এসেছে এবং তাকে দিয়ে সেই চেয়ারম্যান সাহেবের ছেলে হুমকি দেওয়াচ্চছে। কারণ সে জানে আমি লোকেশন বের করতে চাইবো। 

- কিন্তু এতকিছুর সঙ্গে তাহলে ওই এলাকার কার সঙ্গে হাত আছে? 

- সেও গ্রামের মধ্যে আছে। 

- আচ্ছা রুহি এখন কোথায়? 

- রুহি গতকাল রাতে পালিয়েছে, এবং সেই সময়ে খুন হয়েছে পঞ্চম বান্ধবী। 

- বলিস কি? রুহি তোর হাত থেকে বের হয়ে গেল কীভাবে? তারমানে কি... 

- হ্যাঁ সজীব, খুনির সঙ্গে রুহির সম্পুর্ন যোগাযোগ বা সম্পর্ক আছে। 

- কীভাবে? 

- মাথা মোটা তুই? রুহি বের হবার সঙ্গে সঙ্গে খুন হয়েছে পঞ্চম বান্ধবী, আবার সকালেই আমাকে কল দিয়ে খুনি বলে যে রুহি তাদের হাতে। এদিকে রুহি গ্রামে ফিরেছে বিকেলে, তাহলে খুনি যদি তাকে কিডন্যাপ না করে তবে জানলো কীভাবে রুহি রাতে বের হয়ে গেছে? নিশ্চয়ই রুহি তাকে কল দিয়ে বলেছে যে আমার থেকে পালাতে সক্ষম হয়েছে সে। 

- তারমানে কি রুহির সঙ্গে চেয়ারম্যান সাহেবের ছেলের কোন সম্পর্ক? 

- সেটাই ভাবছি। 

.
.

(বানান ভুল গুলো ক্ষমা করবেন) 
.
.

চলবে....  
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 2 users Like Bangla Golpo's post
Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)